মিতু হত্যা: প্রথম মামলার নথি আদালতের হেফাজতে রাখার নির্দেশ
২৩ আগস্ট ২০২১ ১৮:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার সমস্ত নথিপত্র পুলিশের পরিবর্তে আদালতের হেফাজতে তালাবদ্ধ করে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই মামলাটি ইতোমধ্যে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে নিষ্পত্তি করেছে। একই ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়েরের পর নতুনভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বাবুল আক্তারের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার (২৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান এ আদেশ দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে।
স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
আজ (সোমবার) বাবুল আক্তারের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা মামলাটির সব নথিপত্র আদালতের হেফাজতে সংরক্ষণের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সব নথি জুডিশিয়াল হেফাজতে তালাবদ্ধ করে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।
জানতে চাইলে আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় তদন্তে নেমে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। সেগুলোর ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে। তখন মামলা তদন্তের গতিপথ ছিল এক ধরনের, এখন আবার আরেকভাবে তদন্ত হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, আগের নথিপত্র টেম্পারিং করে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আসামি বাবুল আক্তারকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতে পারে। সেজন্য আমরা নথিপত্রগুলো পুলিশ বা জেনারেল রেকর্ড শাখার পরিবর্তে জুডিশিয়াল হেফাজতে রাখার জন্য আদালতে আবেদন করেছি।’
‘আদালত শুনানিতে আমাদের বক্তব্য শুনে নথিপত্রগুলো জুডিশিয়াল হেফাজতে তালাবদ্ধ করে সংরক্ষণের আদেশ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের লকার ও চাবি সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন। আমরা কাল (মঙ্গলবার) সকালেই লকার ও চাবি দিয়ে আসব’– বলেন ইফতেখার সাইমুল।
এদিকে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মিতু হত্যা মামলার নথিপত্রের সার্টিফাইড কপিও আইনজীবীকে সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল বলেন, ‘বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় বেশ কয়েকজন আসামি ও সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ অনেকের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনসহ এসব নথির সার্টিফাইয়েড কপির জন্য আমরা বারবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের সেগুলো সরবরাহ করছে না। সেজন্য আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সার্টিফাইয়েড কপি সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন।’
আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন– মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
ওইদিন বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেননি তিনি। বাবুল আক্তারকে বর্তমানে ফেনী জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুই দফা জামিনের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু জামিন পাননি।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস