২ পাড় ছুঁয়ে গেল পদ্মার সড়ক, অপেক্ষা যান চলাচলের
২৩ আগস্ট ২০২১ ২২:৪১
ঢাকা: ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন, সেদিন যেন স্বপ্নের একটি বীজ বুনেছিলেন তিনি। সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে শাখা-পল্লবশোভিত বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব উপাখ্যান। কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, গত জুলাই পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশের কিছু বেশি। মূল সেতুর কাজ হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ।
সোমবার (২৩ আগস্ট) সকালে পদ্মাসেতুতে সড়ক পথের শেষ স্ল্যাবটি বসানোর মধ্য দিয়ে আরেকটি মাইল ফলক স্পর্শ করল বাঙালির বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘স্বপ্নের পদ্মাসেতু’। ফলে পদ্মাসেতু দিয়ে এখন পায়ে হেঁটে এপার থেকে ওপার যাওয়া যাবে। এখন সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চালাতে প্রয়োজন শুধু পিচ ঢালাইয়ের। প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, পদ্মাসেতুর সড়ক পথে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে অক্টোরের শেষ দিকে কিংবা নভেম্বরের শুরুতে।
সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম সোমবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে বলেন, ‘পদ্মাসেতুর সড়ক পথের শেষ স্ল্যাবটি সকাল ১০টা ১২ মিনিটের দিকে বসানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সড়কপথের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। আমরা আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে করে যাচ্ছি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর যেসব কাজ বাকি আছে সেগুলোও দ্রুততার সাথে চলছে।’
পিচ ঢালাইয়ের কাজ কবে শুরু হবে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অক্টোরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ মাস। আর পিচ ঢালাই দেওয়া শেষ হলেই সেতুর ওপর দিয়ে চলতে পারবে যানবাহন। আমাদের লক্ষ্য, নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করা।’
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুতে রোডস্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ থেকে। মোট বসানো হয়েছে ২ হাজার ৯১৭টি রোডস্ল্যাব। আর এ কাজটি করা হয়েছে ৪টি ভাগে ভাগ করে। স্ল্যাবগুলো ২২ মিটার দীর্ঘ এবং ২ দশমিক ১০ মিটার চওড়া।
পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ করছি। রোডস্ল্যাব বসানো শেষ হওয়ায় আমরা বেজায় খুশি। যারা কাজ করেছেন তারাও অনেক খুশি। বাকি কাজ কার্পেটিং করা। এরপর সেতু দিয়ে চলবে যানবাহন। আমরা আশাবাদী আগামী বছরের জুনের আগেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে।’
এর আগে, গত ২০ জুন শেষ হয় সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। এদিন সেতুতে বসে যায় ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব। আর গত ১৯ আগস্ট পদ্মাসেতুতে গ্যাস লাইস বসানোর কাজ শুরু হয়। এই কাজও খুব দ্রুত শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে, পদ্মাসেতু এবং এর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন বসাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
পদ্মাসেতুতে রেলিং বা প্যারপেড ওয়াল বসানো হবে ১২ হাজার ৩৯৩টি। এ কাজও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। পদ্মাসেতুতে থাকবে দুই ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। একটি যানবাহন চলার পথ আলোকিত করতে স্ট্রিট লাইটিং, অন্যটি কোনো উৎসব কিংবা জাতীয় কোনো দিবসে পুরো সেতু নানা রঙে আলোকসজ্জা করার স্থায়ী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে আর্কিটেকচারাল লাইটিং বলা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বরে পদ্মায় সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ হবে সেতু নির্মাণে।
সারাবাংলা/এসজে/এজেড/পিটিএম