লালমনিরহাটে চা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
২৪ আগস্ট ২০২১ ০৮:২১
লালমনিরহাট: জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে সমতল ভূমিতে চা চাষ হচ্ছে। জেলাজুড়ে এখন ১৩৬ দশমিক ৪৮ একর জমিতে চা বাগান গড়ে উঠেছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে সর্বপ্রথম হাতীবান্ধা উপজেলায়ই চা বাগান গড়ে উঠে। তবে এখন এর গণ্ডি বিস্তৃতি লাভ করে জেলার ৫টি উপজেলায় হচ্ছে চা চাষ। এ শিল্পে সাফল্যও পাচ্ছেন চা চাষীরা। এজন্য প্রতিনিয়তই এ এলাকার লোকজনের কাছে চা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। ভবিষ্যতে চা শিল্পই লালমনিরহাট জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে হাতীবান্ধায় বাণিজ্যিকভাবে ১ একর সমতল ভূমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চা চাষ শুরু করেন শাহানারা বেগম সোমা ও ফেরদৌস আলম দম্পতি। তাদের দেখে এলাকায় অনেকে চা চাষে আগ্রহী হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ধারণা ও প্রশিক্ষণ না থাকায় বিষয়টি তখন তেমনভাবে সাড়া পায়নি। তবে ২০১৫ সাল থেকে চা বোর্ডের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় ক্রমান্বয়ে চা বাগান বাড়তে থাকে। এরি পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে জেলায় ৮২ জন কৃষক চা চাষ করছেন। গড়ে প্রতিমাসে চা চাষীরা প্রতি একর জমি থেকে ২ হাজার কেজি গ্রিন চা পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী গ্রামের চা চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩ বছর আগে ১ একর জমিতে চায়ের বাগান শুরু করি। কিন্তু প্রথম দিকে চা চাষ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমন অবস্থায় এক বছর ধরে স্থানীয় চা বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে চা চাষে সাফল্য আসে। এখন আমার লাভ হচ্ছে।
চা চাষী ধনঞ্জয় কুমার বর্মণ বলেন, চা বোর্ডের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সমতল ভূমিতে এখন আমরা চা উৎপন্ন করতে পেরে খুশি ও গর্বিত। বৈদ্যুতিক সমস্যা ও মালিকের মূলধন না থাকায় হাতীবান্ধা উপজেলার বিছনদই গ্রামে ২০১৪ সালে স্থাপিত ফ্যাক্টরিটি বন্ধ রয়েছে। এতে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে যে, আমাদের উৎপাদিত চা পাতা পঞ্চগড়ে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। এতে আমাদের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা চা ফ্যাক্টরি আবারও চালু করা প্রয়োজন। তাহলে আমাদের পরিবহন খরচ কমে লাভ আরও বেশি হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক (হাতীবান্ধা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আরিফ খান বলেন, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় সমতল ভূমিতে আশাতীত চা উৎপন্ন হচ্ছে, যা চা বোর্ডকে বিস্মিত করেছে। এ অঞ্চলের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। চা চাষের প্রসারে কৃষকদের শ্যালো মেশিনসহ চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে সরবরাহ করে সহায়তা দিচ্ছি। এছাড়াও কৃষকদের বিনামূল্যে কীটনাশক ও ছায়া গাছের চারা বিতরণ করা হয়। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল ব্যানারে চা বাগানের পরিচর্যা ও কর্তন বিষয়ে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ স্কুলের মাধ্যমে চা চাষে ধারণা নিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে চায়ের ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাতীবান্ধার বিছনদই গ্রামে একমাত্র চা প্রসেসিং ফ্যাক্টরিটি বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে বন্ধ থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত চা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে পঞ্চগড়ে গিয়ে। চাষীদের উন্নয়নে চা বোর্ড থেকে কৃষকদের পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়েছে।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে লালমনিরহাট চা চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমন আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একসময় চা চাষই এ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করবে। ৭০০ পরিবারের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে চা চাষ জেলায় টেকসই উন্নয়নের অংশ হবে। আমরা এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
সারাবাংলা/এসএসএ