জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ
২৪ আগস্ট ২০২১ ১০:০০
ঢাকা: প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিবিধি মেনে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক সমন্বয় রেখে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নীতিমালা মেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য বা আলোচনা করার জন্য বলা হয়েছে। কোনরকমের বিরূপ মন্তব্য বা সরকারি কাজের সমালোচনা করা থেকেও বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়া গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মাঠ প্রশাসনের কাছে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠানোর কথাও বলেছেন মন্ত্রিপরিষদের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। কয়েকজন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, ভবিষ্যতে বরিশালের মত ‘উদ্ভট’ পরিস্থিতি এড়াতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বরিশালের ঘটনায় পরিস্থিতি এখন ‘মিটমাট’ থাকলেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে। নাম গোপন রাখার শর্তে কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও), এসিল্যান্ডসহ অন্য কর্মকর্তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনেক সময় বাতিল করতে হয়। সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে থেকে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা। বিষয়গুলো প্রশাসনের উচ্চপর্যায় নজরেও আনা হয়েছে একাধিকবার।
গত বুধবার (১৮ আগস্ট) ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশালে পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় ছাত্রলীগ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, ওই রাতে সদর উপজেলা ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলা চালান স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, শ্রমিক ইউনিয়ন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এরপরই সরকারের নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায় টনক নড়ে।
এরপর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে একটি মামলা দায়ের করেন সদর থানার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান। অন্যটি করেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরির্দশক (এসআই) শাহজালাল মল্লিক। দুই মামলাতে প্রধান আসামি করা হয় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে।
এরমধ্যেই মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)।
সংঘর্ষের পরদিন বরিশালে সেরনিয়াবাত ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু অভিযোগ করেন, ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনওর বাধার মুখে পড়েন। ইউএনও সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে যান মেয়র। তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ইউএনও।
তবে রোববার ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি মামলার আবেদন করা হয়। যদিও রোববার রাতেই ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের বিষয়ে সমঝোতা হয়। ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ সরকারি কর্মকর্তারা ও দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বরিশালের ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। এটি এখন বেশি মাত্রায় নেই, বিষয়টি সমাধানের দিকে চলে যাচ্ছে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও