ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর গত ১৯ আগস্ট থেকে দেশের সকল পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই এসব জায়গায় বেড়েছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়।
তবে দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা লাগোয়া ওয়াইজ ঘাট এলাকায় অবস্থিত আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে গিয়ে। খুব বেশি দর্শনার্থী না আসলেও সিস্টেম জটিলতার কারণে কেউ ঢুকতে পারছেন না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আহসান মঞ্জিলে যেতে চাইলে অনলাইনে কাটতে হবে টিকিট। অনলাইনে টিকিট কাটার সিস্টেমের কারণে কেউ ফেরত যাচ্ছেন আবার কেউ অনেক চেষ্টার পর টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করছেন।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে আহসান মঞ্জিল গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টার বন্ধ। মূল ফটকও বন্ধ। পাশেই ছোট একটা গেট খোলা। মূল ফটকের সামনে তরুণ ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন রবিউল ইসলাম ও তার পরিবার। এসেই বিপাকে পড়েছেন টিকিট বিড়ম্বনা নিয়ে। কাউন্টার বন্ধ পেয়ে জানতে চান টিকিটের বিষয়ে। পরে জানতে পারেন অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে।
রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে। কিভাবে কাটতে হবে সেটাই জানি না। আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পে করতে হবে। বিকাশে টাকা আছে, কিন্তু অনলাইনে ঢুকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবার ইমেইল থাকতে হবে। আমার তো ইমেইল নেই। তাই রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি। টিকিট কাটা হলো না, তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। সব টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। ঘুরতে আসা অনেকের স্মার্ট ফোন নাও থাকতে পারে।
মিরপুর থেকে আনিসুর রহমান তার স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে আহসান মঞ্জিলে এসেছিলেন। টিকিট কাটতে না পেরে চলে যাচ্ছিলেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এরকম সিস্টেম হঠাৎ করে চালু করা ঠিক হয়নি। সবাই তো অনলাইনে টিকিট কাটতে পারে না। তাহলে যারা টিকিট কাটতে পারবে না তারা কি ঘুরবে না? যাদের ফোন নাই তাদের অফিস থেকে কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
জানতে চাইলে আশিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, টিকিট কাটতে অনেক জটিলতা। ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে ইমেইল, মোবাইল নম্বর, নাম-ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এরপর টিকিট কাটার জন্য লগইন করতে হয়। সেখানেও যে সিস্টেম আছে তা অনেক জটিল। এরপর বিল পরিশোধের জন্য আলাদা অপশনে গিয়ে পেমেন্ট করতে হয়। পেমেন্ট হয়ে গেলে ওটিপি নম্বর দিয়ে টিকিট কনফার্ম করতে হয়। সেটার প্রিন্ট কপি বা অনলাইনে কপি দেখাতে হয়। এত জটিল প্রসেস পার করে কেউ টিকিট কাটতে পারছেন আবার কেউ পারছেন না।
মূল ফটকে কর্মরত সেখানকার স্টাফ আকতার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, হাজার হাজার টিকিট ছাপিয়ে রেখেছি, কিন্তু সেগুলো পড়ে আছে। হঠাৎ করে সব বন্ধ করে দিয়ে অনলাইন সেবা চালু করেছে। ফলে অনেক মানুষ ফিরে যাচ্ছে। অনলাইন চালু থাকলে লোকজন তেমন একটা হবে না।
দায়িত্বরত আনসার সদস্য নাজমুল হক বলেন, সবার বিকাশে টাকা থাকে না। কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না। বেশির ভাগ লোকই ফিরে যাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯ আগস্ট সরকারি নির্দেশনা দিলেও ২২ আগস্ট থেকে আহসান মঞ্জিল খোলা হয়। সেদিন থেকেই অনলাইনে টিকিট কাটার সিস্টেম চালু হয়।
জানতে চাইলে আহসান মঞ্জিলের সহকারী কর্মকর্তা (এও) নাসির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, সিস্টেমটা নতুন হয়েছে। বুঝতে একটু সময় লাগছে। আবার অনেকে সহজেই টিকিট কাটতে পারছেন। অনেককে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবার জন্য হয়ত এই মুহূর্তে এই সিস্টেম কাজে আসছে না তবে ভবিষ্যতে আরও সহজ কি চিন্তা করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। সফটওয়্যার শপ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সিস্টেমটি অপারেট করছে।
এদিকে আহসান মঞ্জিলের ভেতরে দেখা যায়, সব এখনও অপরিস্কার। দীর্ঘদিন মঞ্জিল বন্ধ থাকায় মাঠের ঘাস হাঁটু সমান বড় হয়েছে, ধুলোবালি জমে স্তুপ হয়েছে। গাছের ডালপালা বেড়ে দেখতে বিশ্রি লাগছে। সাধারণ মানুশ যারা প্রবেশ করেছেন তাদের অভিযোগ-এত লোক এখানে কর্মরত এরপরেও পরিস্কার করা হয়নি। সরকার বিনোদন কেন্দ্র খুলে দিয়েছে জেনেও কিছুই প্রস্তুত করা হয়নি। এখানে অনেকেই বাচ্চাদের নিয়ে আসেন। বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলা করত, কিন্তু জঙ্গল থাকায় সে সুযোগ আর নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার সদস্য জোবায়ের হাসান বলেন, আস্তে আস্তে সব পরিস্কার করা হবে।