Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ঢলের ৪ বছর: থমকে গেছে প্রত্যাবাসন আলোচনা

সারাবাংলা ডেস্ক
২৫ আগস্ট ২০২১ ১৩:০১

ঢাকা: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের এই দিনে (২৫ আগস্ট) সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এসব রোহিঙ্গাদের দেশটিতে ফেরত পাঠাতে গত চার বছর ধরে সরকার চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সে উদ্যোগ। আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে কয়েকবার দিনক্ষণ ঠিক করার পরও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। তবে দ্বিপাক্ষিক, আন্তর্জাতিক সব মাধ্যম থেকেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ামারের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হলেও গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করার পর সেই উদ্যোগও থেমে গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে আলোচনা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি চলমান বিষয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা দেখছে। তারা সব ঠিক করে যখন দিন ধার্য করে দেবে, তখন রোহিঙ্গাদের পাঠান আমাদের দায়িত্ব।

আপাতত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করলেও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠালেই চূড়ান্ত সাফল্য আসবে বলেও মনে করেন আরআরআরসি’র কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত।

জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার একটি চুক্তি করে। তার দুই মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হয়। ওই গ্রুপ গত দুই বছরে চার দফা বৈঠক করে। সর্বশেষ বৈঠক ২০১৯ সালের মে মাসে মিয়ানমারের নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়।

পরে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারের অনুরোধে ওই বৈঠক দুইমাস পিছিয়ে ওই বছরের মে মাসে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মার্চে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দেখা দিলে ওই বৈঠকও বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির শীর্ষ নেতা অং সান সু চিসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের আটক করে ক্ষমতা দখল করে। এতে করে আবারও থেমে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা তিন বছর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনএইচসিআর’র তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে জনসংখ্যা। হচ্ছে অপরাধ। রয়েছে ভয়াবহ করোনা ঝুঁকিতে। এদিকে রোহিঙ্গাদের বাসস্থানের কারণে উজার হচ্ছে বন। সামাজিক, অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব পড়ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে। এ নিয়ে দিন দিন তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ। তাই এদেরকে দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়ার পক্ষেই মত সকলের।

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

বাংলাদেশ মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর