অক্টোবরেই ‘খুলছে’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
২৫ আগস্ট ২০২১ ২০:১২
ঢাকা: দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা মাহামারির বিস্তার ঠেকাতে বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর সংক্রমণ বাড়লে-কমলেও একবারের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা খোলার চেষ্টা করেনি প্রশাসন। তবে এবার শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিশ্চিতের শর্তে অক্টোবরের শুরুতেই খুলতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বেশ কয়েকজন ‘বড়কর্তা’র সঙ্গে কথা বলেছে সারাবাংলা। তবে বিষয়টি যেহেতু খোদ শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দেখছেন, তাই তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই অক্টোবরেই বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হতে পারে।
মন্ত্রণালয় ও মাউশির সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এর আগেও একবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। যদিও তখন থেকেই বিদ্যালয়গুলো ক্লাসের উপযোগী করতে সংস্কার শুরু হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে যা যা প্রয়োজন সেই কাজগুলো করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। এতে কমপক্ষে তিনমাস পড়িয়ে এই শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যক্রম কোনোরকমে শেষ করা যাবে।
এবারের শিক্ষাবর্ষ কয়েক মাস বাড়তে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলছেন, সেই পরিকল্পনাও রয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি এই শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় তাহলে সিলেবাস পরিপূর্ণভাবে শেষ করা যাবে। এবার কোনো পরীক্ষাই বাতিল হবে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে আমরা সকলের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সবার ভ্যাকসিন নিশ্চিত হয়ে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো বাধাই থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রথমে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে। এরপর খুলবে কলেজ ও বিদ্যালয়। তবে অক্টোবরের মধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠকক্ষ মুখর হবে বিদ্যার্থীদের কোলাহলে।
অবশ্য মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে নিচে নামছে। এটা আমাদের জন্য সুখবর। আর সংক্রমণের এই গতি নামতে থাকলে শিগগিরই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব। তবে তা ধাপে ধাপে।’
ধাপে ধাপে বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি শিক্ষার্থী আধিক্যের কথা বলেছেন, যা সংক্রামক রোগ ছড়াতে সহায়তা করে। দীপু মনি বলেন, ‘সবাই হয়তো শুরু থেকেই সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস করার সুযোগ পাবে না। একটু সময় নিয়ে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। অপেক্ষা শুধু সংক্রমণের হার কমার।’
এদিকে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দিতে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনও। মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সবগুলো স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষাকরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে ফিরতে চায়। আমরা তাদের জন্য বিদ্যালয় সাজিয়ে রেখেছি। অনুমতি পেলে কালই বিদ্যালয় খুলে দেব। তবে এখন যে পরিস্থিতি তাতে হুট করে স্কুল খোলা যায় না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিম্নগামী। সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের সহযোগিতায় সংক্রমণের হার দ্রুত কমছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিদ্যালয় আর খুব বেশি দিন বন্ধ থাকবে না।’
উল্লেখ্য, দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় তা বাড়িয়ে এ বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসও পুরোটাই বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম