গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে
২৫ আগস্ট ২০২১ ১৯:০৫
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পর্যায়ে চলা গণটিকা কর্মসূচিতে যারা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে ৭ সেপ্টেম্বর।
বুধবার (২৫ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।
অধ্যাপক ডা. খুরশিদ বলেন, ‘গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজ ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। এই কয়দিনে আরও ভ্যাকসিন আসবে। দ্বিতীয় ডোজ শেষ করতে কোনো সমস্যা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে গণটিকা চলাকালে যে ব্যক্তি যেই কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছেন, সেখানেই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। কিছু কিছু দেশ আমাদের কাছে মডার্না ও ফাইজারের ভ্যাকসিন চাচ্ছে, এটা এখন দেওয়া সম্ভব নয়। শিগগিরই দেশে ফাইজারের ৬০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। আমাদের হাতে এখনও ৩৫ লাখের মতো ভ্যাকসিন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন দিয়ে আমরা ক্যাম্পেইন ভ্যাকসিনেশনের দ্বিতীয় ডোজ সম্পূর্ণ করব। আমরা আশা করছি, যাদের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করা হবে।’
এসএমএস ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আজ একটি বৈঠক আছে। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমকে আমরা ক্যাম্পেইন ভ্যাকসিনেশন বলতে পারি। পরীক্ষামূলকভাবে আমরা এটি বাস্তবায়ন করেছিলাম। আমাদের সক্ষমতা যাচাই করা এবং আমরা দিতে পারি কি না, সেটা যাচাইয়ের জন্য।’
বিগত গণটিকাদান কর্মসূচির সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বলেন, ‘চেষ্টা করেছি; আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। দুই-চার জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ক্যাম্পেইন সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’
দেশে নমুনা পরীক্ষার জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কিছু র্যাপিড আরটি পিসিআর মেশিন কেনার চেষ্টা চলছে। নতুন করে আরও ৩০টি আরটি পিসিআর মেশিন কেনা হচ্ছে। উপজেলাতে জিন এক্সপার্ট মেশিন সেনসেটিভিটি ১০০ শতাংশ। এই মেশিনগুলাকে চালু করার জন্য একটা স্পেশাল ইক্যুইপমেন্ট লাগে, যেটা আমরা ইতোমধ্যেই সংগ্রহের ব্যবস্থা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রত্যেকটা মেশিন নষ্ট হতে পারে। যেকোনো মেশিন, এয়ার কন্ডিশনও হতে পারে। এই জিনিসগুলো আমাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা যথাযথ ব্যবহারের চেষ্টা করছি।’
এ সময় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি যত্ন করে ব্যবহারের আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব যে জিনিসগুলো হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করবেন। যত্ন করে ব্যবহার করবেন এবং এটা রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন যে, ৫৬১টি ভ্যান্টিলেটর পেয়েছি। এগুলো আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দেব। এই যন্ত্রগুলো আমরা ৩০০টি হাসপাতালে দেওয়ার কথা ভাবছি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেনাকাটা প্রসঙ্গে ডিজি বলেন, ‘আপনারা জানেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবচেয়ে বড় একটি প্রক্রিয়া হলো কেনাকাটা। সারাদেশের হাসপাতালগুলো যে চাহিদা দেয়, সে অনুযায়ী সেগুলো হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সিএমএসডি। এই প্যানডেমিকের সময় আমাদের সহায়তা করেছেন, সেজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহর প্রশংসা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, উনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উনার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ জিনিসগুলো নিয়ে এসেছেন। এটা মানুষের কল্যাণে কাজে আসবে এবং মানুষের জীবন বাঁচাবে।’
অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ৫৬১টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে ৩০০টি বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাঠানো দুই চালানে ৫৬২টি পোর্টেবল আইসিইউ ভেন্টিলেটর আসে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ বিমানবন্দরে এসে ভেন্টিলেটরগুলো গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা চার চিকিৎসক- নেফ্রোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ সাদেক, কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মাসুদুল হাসান, জাতিসংঘের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাহমুদ উস শামস চৌধুরী, কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. চৌধুরী হাফিজ আহসান ও কানাডায় বসবাস করা চিকিৎসক আরিফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে পাঠানো হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের মহাপরিচালক আবু হেনা মোরশেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ উদ্দিন মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম