‘দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ১৭% নাগরিক মানসিক রোগে আক্রান্ত’
২৬ আগস্ট ২০২১ ০০:২৮
ঢাকা: দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৭ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে প্রাণহানির সংখ্যা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর তুলনায় বেশি। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা ও চিকিৎসায় সম্পদ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। শুধু তাই নয়, দেশে মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি রয়েছে। ফলে মানুষ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে সর্বোচ্চ অধিকার ভোগ করতে পারছে না।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ব্র্যাক আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশল (BRAC Mental Health Strategy) উদ্বোধন করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এজেন্ডার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি সাধন অন্যতম। দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে মাল্টিসেক্টোরাল পদ্ধতিতে কাজ করতে পারে। মানসিকভাবে সুস্থ জাতি ও মানসিকভাবে সুস্থ বাংলাদেশ গড়তে একই লক্ষ্য সাধনে আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এখনো চলমান। তাই ব্র্যাক মনে করছে, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো সমন্বিত পদ্ধতি এবং সরকারের সঙ্গে জোরদার অংশীদারিত্বের মাধ্যমে মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশলটির বিবরণ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের (ব্র্যাক আইইডি) পরার্মশক এবং অক্সফোর্ডের কনসাল্টিং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নার্গিস ইসলাম। কৌশলটির মূল উপাদান এসেছে একটি প্যারা কাউন্সেলর মডেল থেকে। মডেলটি তৈরি করেছে ব্র্যাক আইইডি এবং এরই মধ্যে এটি বাস্তবায়নও করেছে।
প্যারা-কাউন্সেলিং মডেল বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে ব্র্যাক আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম বলেন, আমরা এটাকে মানসিক স্বাস্থ্য বলিনি। কিন্তু গত ৪৯ বছর ধরে আমরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকেছি, সমর্থন ও আশা জুগিয়েছি এবং তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করেছি। আমাদের আজকের এই উদযাপনের মুহূর্ত তৈরি হয়েছে যখন আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের ওপর ভিত্তি করে ব্র্যাকের জন্য প্রথম মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কৌশলটি প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে পেরেছি।
কৌশলটির ভিত্তিতে প্রণীত ব্র্যাকের মানসিক স্বাস্থ্য মডেলটির পাইলট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ডা. মোর্শেদা চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ মানসিক স্বাস্থ্যকে জনস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন, বর্তমানে এ সংক্রান্ত সেবা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখন বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর পটভূমি আমাদের ওপর যে গভীর মানসিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে, তাতে সবার জন্য এই সেবা উন্নত করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ এবং কার্যকর ও নৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের প্রতি ব্র্যাক তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। কৌশলটি বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের উদ্দেশ্যে চারটি কৌশলগত লক্ষ্য ও এদের আনুষঙ্গিক লক্ষ্যগুলোর রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পোসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর