তাহিরপুরে ২ গ্রামের ঘরবাড়ি-ফসলি জমি বালুর নিচে
২৬ আগস্ট ২০২১ ০৮:২৩
সুনামগঞ্জ: সীমান্তের ওপার থেকে মেঘালয়ের বুক চিরে নেমে আসা ঢলে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চাঁনপুর ও রজনী লাইন গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে দুই গ্রামের শতাধিক পরিবার জীবন-জীবিকা নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালে এভাবে একবার ঢল নেমে এসেছিল। সেই ঢলের সঙ্গে আসা পাথর ও বালুতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারও সপ্তাহখানেক আগে একইভাবে নামে পাহাড়ি ঢল। সেই ঢলের পানির সঙ্গেও এসেছে বালু ও পাথর। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে দুই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা প্রায় আড়াই হাজার পরিবারকে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁনপুর গ্রামের তৌফিক মিয়ার ২ শতাংশ ফসলি জমি ও বাড়ি, আসক মিয়ার মুদিমালের দোকান এবং সাদেক মিয়ার ৮ শতাংশ, জয়নাল মিয়ার ১০ শতাংশ, সিরাজ মিয়ার ৫ শতাংশ, জৈন উদ্দিনের ৫ শতাংশ ও নিজাম উদ্দিনের ১০ শতাংশ ফসলি জমি বালুর নিচে চলে গেছে। এছাড়াও রাসেল মিয়া, রফিকুল মিয়া, আব্দুল আলী, জৈনুদ্দিন, আফর উদ্দিন, মিনারা বেগম, নুরুল ইসলাম, মানিক মিয়া, অঞ্জনা বেগম, নজরুল ইসলাম, রহিম মিয়া, আলকাছ মিয়া ও ফায়েজ মিয়ার বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢলের পানিতে আসা বালু ও পাথর।
রজনী লাইন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়— আব্দুর রহিম, নুর মিয়া, শফিকুল ইসলাম, শামছুদ্দিন, রুকন উদ্দিন ও ইছব আলীসহ গ্রামের অন্তত ৩০ অধিবাসীর ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। এছাড়াও ইয়াছিন মিয়ার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে ঢলের পানিতে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফায়াজ মিয়ার স্ত্রী ফৌজিয়া বেগম বলেন, ঢলের পানিতে আমার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি।
অঞ্জনা বেগম বলেন, প্রবল বেগে নেমে আসা ঢলের পানির সঙ্গে বালু-পাথরও আসতে থাকে। এক ধাক্কায় আমার ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমি দ্রুত সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে যাই। গাছ আঁকড়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচাই। আমার স্বামী নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, ওই স্থানের একটি ছড়া দিয়ে পানি আসে এবং বর্ষায় ঢল নামে। সম্প্রতি ঢলের সঙ্গে বালু ও পাথর আসায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘর রক্ষায় উপজেলার পক্ষ থেকে দুই হাজার বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, গ্রামের রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও ফসলি জমির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি রক্ষায় বালুর বস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা ঢলে আমাদের দেশের তিনটি গ্রাম ও জমিজমার ক্ষতি হয়েছে। ওখানকার বালু অপসারণ করে নিলামে বিক্রি করার চিন্তা করছি। ফসলি জমিকে চাষাবাদের উপযোগী করে দেওয়ার চিন্তাও করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এএম/টিআর