বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদকে জড়িয়ে শেখ সেলিমের বক্তব্যের প্রতিবাদ
২৬ আগস্ট ২০২১ ২১:৪১
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) জড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি। দলটি বলছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর কর্নেল তাহের বা হাসানুল হক ইনু বা জাসদের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বিবৃতিতে সই করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাসদকে যুক্ত করে শেখ সেলিমের বক্তব্য রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমূলক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। শেখ সেলিম বঙ্গবন্ধুর খুনি গোষ্ঠী ও খুনি গোষ্ঠীর পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারকদের আড়াল করার উদ্দেশ্যেই মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস পেয়েছেন। জাসদ কখনই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেনি।
জাসদ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সুফলভোগীও নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, কারা খন্দকার মুশতাকসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, কারা খুনিদের রক্ষা করেছে, কারা খুনিদের পুরস্কৃত করেছে— এগুলো প্রকাশিত তথ্য। খন্দকার মুশতাকের ৮৩ দিনের অবৈধ শাসনকালে কারাবন্দি জাসদ নেতাকর্মীদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। বরং ওই ৮৩ দিনেও জাসদের নেতাকর্মীদের ওপর চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হয়েছে। চট্টগ্রামের জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা খসরু, রাজবাড়ীর জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ, গাইবান্ধার জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তমসহ সারাদেশে কয়েকশ জাসদ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, ‘দূরের না, আপন লোকরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আমার মা যাদের রেধে খাওয়াতেন, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এজাহার, এফআইআর, তদন্ত, চার্জশিট, সাক্ষীদের জেরা ও সওয়াল জবাব, চার্জের ওপর আদালতে যুক্তিতর্ক, আদালতের রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণের কোথাও জাসদ বা জাসদের কোনো নেতার নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। এটাই স্বাভাবিক ও সত্য। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর জাসদের কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। শেখ সেলিম বা কেউই মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ইতিহাসের এই সত্য আড়াল করতে পারবেন না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ সেলিম তার আপন মামা বঙ্গবন্ধু ও আপন ভাই শেখ মনির লাশ ফেলে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সঙ্গে যুক্ত তৎকালীন আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে কী করছিলেন— তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে জাসদ। বিবৃতিতে দলটি বলছে, এ তথ্য জাতি জানতে চায়।
জাসদ বলছে, জাসদ গঠন ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্তি বঙ্গবন্ধুকে দুর্বল করে দিয়েছিল, একা করে দিয়েছিল, অসহায় করে দিয়েছিল— এটি সত্য। কিন্তু যারা জাসদ গঠন করেছিলেন তারা জাসদ গঠনের আগে বঙ্গবন্ধুকে তার নেতৃত্বে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। এমনকি ছাত্রলীগের বিভক্তি, একই দিনে দুই জায়গায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সম্মেলনের একটিতে বঙ্গবন্ধুর যোগদানের পরও জাসদ গঠনের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। কাদের চাপে বঙ্গবন্ধু বিভক্তির পথে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনকেও বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল— তাও আজ জাতির সামনে প্রকাশিত। সুতরাং জাসদ গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্ত করার দায়ও জাসদের না, বরং ওই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীরই।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর