মামলা জটিলতায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প
২৮ আগস্ট ২০২১ ০৮:৩৬
ঢাকা: মামলার জটিলতায় পড়েছে ‘পূর্বাচল নতুন শহর (ইউসুফগঞ্জ)’ শীর্ষক প্রকল্পটি। বারবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ করা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে বেড়েছে ব্যয়ও। অবশেষে পুরো কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত করা হচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিজস্ব অর্থায়নের এ প্রকল্পটি। গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এ সব তথ্য উঠে আসে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা পর্যালোচনা করা হয়।
শহীদ উল্লা খন্দকার স্বাক্ষরিত পিএসসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে— প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৩১১ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৯৯৫ সালের জুলাই হতে ২০১০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য এটি অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ব্যয় বেড়ে গিয়ে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় ১৯৯৫ সালের জুলাই হতে ২০১৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদিত হয়। বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি প্রকল্পটি।
প্রকল্পের বাস্তব কাজ চলমান অবস্থায় বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ব্যয় বৃদ্ধি করে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার একবছর অর্থাৎ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া তিনবছর অর্থাৎ চলতি বছরের জুনের পরিবর্তে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদকাল পঞ্চমবার চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এ সময়েও শেষ হয়নি প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
এ কারণে গত ১২ মে অনুষ্ঠিত পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) সভায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ১ বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল পযন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। প্রকল্পের শুরু হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাস্তব অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
পিএসসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে— প্রকল্পের ধীর গতি এবং অবশিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সকল কাজ সমাপ্ত হবে কিনা সেটি জানতে চাওয়া হয়।
এ সময় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্রকল্পের আওতাধীন প্রধান প্রধান কার্যক্রম, যেমন ভূমি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। উচ্চ আদালতের মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় প্রতিষ্ঠানিক প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হলেও অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্প এলাকায় পানি ও গ্যাস সরবরাহের জন্য আপাতত ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ লাইন স্থাপনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে। সে মোতাবেক ওয়াসা দ্রুত সরবরাহ লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে তিনি সভাকে অবহিত করেন। প্রকল্প এলাকায় পানি সরবরাহ, এলপিজি স্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে থানা স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সব বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়।’
এ প্রকল্পের আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক প্লটগুলোর ওপর উচ্চ আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত নিষ্পত্তি করে প্লটগুলো স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটি, বাজারসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো দ্রুত নির্মাণের উদ্যোগ বিষয়ে সবাই একমত হয়। একইসঙ্গে প্রকল্প এলাকায় পানি সরবরাহের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন ও প্রকল্প এলাকায় লিকুইড পেট্রোলিয়াম (এলপিজি) গ্যাস স্টেশন, স্যুয়ারেজ, ড্রেনেজ ও সলিড ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট এবং থানা স্থাপনসহ জরুরি সেবা সংক্রান্ত সব অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়েও একমত পোষণ করা হয়।
সভায় প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় সুউচ্চ আইকনিক টাওয়ার স্থাপনের বিষয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির উচ্চতা সংক্রান্ত ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদকালের মধ্যে সকল কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না তাই প্রকল্পটি এ পর্যায়ে সমাপ্ত করে নতুন প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে মতামত দেন। আলোচনায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত করার জন্য ডিপিপি সংশোধনের বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো এবং অসমাপ্ত ও অবশিষ্ট কাজগুলো একত্রে পৃথক একটি প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করেন।’
সারাবাংলা/জেজে/একে