আফগানিস্তানের সাবেক মন্ত্রী জার্মানিতে ডেলিভারিম্যান
২৮ আগস্ট ২০২১ ১১:৩০
ঢাকা: সৈয়দ সাদাত। ক’দিন আগেও ছিলেন আফগানিস্তানের যোগাযোগমন্ত্রী। নিয়তি ফেরে এখন তিনি ডেলিভারিম্যান। অবশ্য নিজ দেশে নয়, আফগানিস্তান থেকে হাজার মাইল দূরে জার্মানিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন তিনি। জার্মানির রাস্তায় কমলা রংয়ের টি শার্ট, ডেলিভারি ব্যাগ, সাদা হেলমেট এবং নীল রংয়ের জিনস ও কেডস পরে বাইসাইকেল চালিয়ে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করছেন তিনি। অথচ নিজ দেশে কিছু দিন আগেও ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ লাগানো গাড়িতে সরকারি দফতরে যেতেন তিনি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে পাড়ি জমান সৈয়দ সাদাত। তিনি এখন ইউরোপের দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাইপজিগে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। জার্মানিতে এ ধরনের কাজ করায় দেশের অনেকেই তার সমালোচনা করছেন। কেননা, ২০১৮ সালে দায়িত্ব ছাড়ার আগে দুই বছর আফগান সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সঙ্গত কারণেই ‘ন্যাশনালিজম’ ইস্যুতে সাবেক সহকর্মীদের অনেকেই তার ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করছেন। কিন্তু এখন তার কাছে কাজ মানে কাজই।
আনর্জাতিক গণমাধ্যমকে সৈয়দ সাদাত বলেন, ‘আমার আফসোসে ভোগার কোনো কারণ নেই। আমি আশা করি, অন্য রাজনীতিকরাও একই পথ অনুসরণ করবেন, পালিয়ে না থেকে বরং মানুষের সঙ্গে কাজ করবেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন- আফগানিস্তান ফের তালেবানের দখলে যাওয়ার পর সাদাতের এ গল্প অনেকের জন্য উদাহরণযোগ্য হবে। এরইমধ্যে যারা পরিবার-পরিজনসহ দেশ ছেড়েছেন বা ছাড়তে চাইছেন তারাও হয়তো এ ধরনের একটা কাজ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবেক আফগানমন্ত্রী সৈয়দ সাদাতকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেবেন।
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার ঠিক আগে এ বছরের শুরু থেকে সেখানে আফগান আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ১৩০ শতাংশ বেড়েছে। সুতরাং মন্ত্রিত্বের মত অতীত থাকার পরও জার্মানিতে ভালো একটি কাজ খুঁজে পেতে সৈয়দ সাদাতের মতো অনেককেই নিয়তির সঙ্গে আপস করতে হবে।
ব্রিটেনের নাগরিকত্বধারী সৈয়দ সাদাত বলেন, ‘এখানে ভাষাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য প্রতিদিন বিকলের শিফটে ছয় ঘণ্টার কাজ শুরুর আগে চার ঘণ্টা জার্মান ভাষা শিখি।’
আইটি ও টেলিযোগাযোগে উচ্চরত ডিগ্রীধারী সৈয়দ শাদাত জার্মান শহরের ব্যস্ত ট্রাফিকের মধ্যে বাইসাইকেলে খাবার সরবরাহ করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘প্রথম কয়েকটি দিন কাজটি আমার কাছে উত্তেজনাপূর্ণ এবং কঠিন ছিল। এখন স্বাভাবিক মনে হয়।’
সারাবাংলা/এজেড