Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কক্সবাজার হবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ আগস্ট ২০২১ ১৫:২৫

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে কক্সবাজার হবে বিশ্বের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। একেক সময় পৃথিবীতে একেক জায়গা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। একসময় হংকং, তারপরে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, এখন দুবাই কিন্তু আমি বলতে পারি যে ভবিষ্যতে কক্সবাজারটাই হবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।’

রোববার (২৯ আগস্ট) সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ের সমুদ্রে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর থেকে টানা মেয়াদে তার সরকার এভিয়েশন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করব। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করব। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।’

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরে যেন আরও সুপরিসর বিমান নামতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমস্ত বিমান নামতে পারে সেইভাবেই কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আমরা উন্নত করব এবং এটিকে একটা আন্তার্জতিকমানের বিমানবন্দর করা হবে।’ তা ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরি করে দেওয়াসহ কক্সবাজারকে ঘিরে নানারকম পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটাকে সামনে রেখে সারাবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই আমাদের দেশটাকে। এতে আর্থিকভাবে আমাদের দেশ অনেক লাভবান হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসে আমাদের এক কোটির কাছাকাছি মানুষ থাকে। তারা কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্লেন পেলেই সেখানে চড়তে চায়। তাদের যত কষ্টই হোক। কিন্তু যে অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হতো। কারণ আমি তো নিজে প্রায়ই যেতাম বিদেশে। কাজেই আমার বিমানে যাওয়ার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু তারপরও মনে হত নিজের দেশের জাহাজে যাচ্ছি। এটিই সব থেকে বড় কথা ছিল।’

তাই টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন থেকে পরিচালনাকালে অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ক্রয় করার করাসহ অ্যাভিয়েশন খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। আমরা শুধু ওই পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকব না। পাশাপাশি যে সমস্ত বন্ধুদেশ আছে, সেখানেও বিমান যেন যেতে পারে আমরা সেই চেষ্টাই করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দর; এই বিমানবন্দরটাকে উন্নত করতে চাচ্ছি। এটি একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে যেন উন্নত হয়। যেন আমাদের ভুটান নেপাল ভারতের কয়েকটি রাজ্য এই বিমানবন্দরটা ব্যবহার করতে পারে। সেইভাবে এটাকে একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসাবে আমরা উন্নত করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ খাতে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তৈরি হয় বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। আমরা সেভাবেই এগুলোকে আধুনিক করতে চাই। কাজেই যারা বিমানে কাজ করেন তাদের অনুরোধ করব, সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে এটি পরিচালনা করবেন। সিভিল অ্যাভিয়েশন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে একটা আন্তর্জাতিকমানের যেন হয় আপনারা তা দেখবেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তার্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক থার্ড টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। যেটা সব থেকে মডার্ণ একটা এয়ারপোর্ট হিসেবে যেন গড়ে ওঠে। আমরা সেভাবে কাজ করছি। তারা করোনার মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। দুভার্গ্য যে আমরা নতুন ১৬টি বিমান নিলাম কিন্তু আমরা চালাতে পারছি না। তার কারণ হচ্ছে করোনার কারণে সমস্ত যাতায়াত বন্ধ। এটি আমাদের জন্য সত্যিই খুব দুঃখের বিষয়। যখন আমরা প্রস্তুতি নিলাম তখনই করোনা এসে সবকিছু স্থবির করে দিলো। আশা করি এ থেকে আমরা মুক্তি পাবো।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে, আমাদের বেসামারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে ক্যাটাগরি ১’ এ উন্নীত হয়েছে। এটি উন্নীত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ক্যাটাগারি ১’এ উন্নীত হতে পারব খুব শিগগরই। সেইভাবেই আমরা দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমাদের সঙ্গে যারা কর্মরত, তারাও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন।’

ক্যাটাগারি ১-এ উন্নীত হলে আন্তর্জাতিক অনেক জায়গায় বাংলাদেশের বিমান সরাসরি যেতে পারবে এবং আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা সব থেকে বেশি সুবিধা হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজারের বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে। যার ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোইং ৭৭৭ ও ৭৪ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরিই কক্সবাজারে আসতে পারবেন।’

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর সরকার ১ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মে মাসে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও এর আগেই এটি সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলের বাইরে থাকলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সাবাজারে বেড়াতে যেতেন বলে জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর তিনি যেতেন। কক্সবাজারের সামনে আপনারা যে বড় ঝাঁউবনটা দেখেন, সেটিও কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগেই করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কক্সবাজার সী-বীচ; পৃথিবীর কোনো দেশে এত লম্বা বালুকাময় সি-বিচ নেই। ৮০ মাইল লম্বা সি-বিচ। কাজেই এটিতে আরও উন্নত করা, আকর্ষণীয় করে তোলা এবং পর্যটন নগরী গড়ে তোলা জাতির পিতার একটা স্বপ্ন ছিল। কাজেই কক্সবাজারটা নিয়ে তার অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল, স্বপ্ন ছিল; এটি একটা আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসবে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে আর বাংলাদেশ আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হবে।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আসে তারা অনেক বড় বড় কথা বলেই এসেছিল। জাতির পিতার প্রতি অনেক কুৎসা রটনা করেছিল। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনাগুলো নষ্ট করেছিল। তারা দেশের উন্নয়নে কাজ করেনি কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করত না। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া; এরা কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উন্নতিটা বিশ্বাস করে না। তা যদি করত তাহলে ১২ বছরের মধ্যে আমরা যেটা করতে পেরেছি, তারা সেটা ২১ বছরের করতে পারত কিন্তু তারা করেনি।’

কক্সবাজারকে বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘বালুকাময় সি-বিচ পৃথিবীতে খুব কম আছে। কক্সবাজারকে সেখানে আমরা বিদেশিদের জন্য স্পেশাল জোন করে দেব। যেখানে শুধু বিদেশিরাই আসতে পারবে এবং তারা যেতে পারবে। তারা তাদের মতো যেন উপভোগ করতে পারে। সে ব্যবস্থাটা করে দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই এয়ারপোর্ট সম্প্রসারণ হলে পরে আমি মনে করি যে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য যত প্লেন যাবে তাদের রিফুইলিংয়ের জন্য সবথেকে বেশি একটা সুবিধাজনক জায়গা হবে কক্সবাজার। কারণ এক একসময় পৃথিবীর একটি জায়গা কিন্তু উঠে। এক সময় হংকং, তারপরে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, এখন দুবাই কিন্তু আমি বলতে পারি যে ভবিষ্যতে কক্সবাজারটাই হবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।’

‘যেখানে খুব স্বল্প সময়ে এখানে এসে নামতে পারবে। রিফুউলিং করতে পারবে। যেতে পারবে। পাশাপাশি আমরা এতো চমৎকার করে আমরা সাজাবার পরিকল্পনা নিয়েছি।’ এক্ষেত্রে সোনাদিয়াতে ইকোপার্ক, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বিমানবন্দর গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক চিন্তা-পরিকল্পনা রয়েছে। আর বিশেষ করে কক্সবাজার নিয়ে তো আরও বেশি। কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ এবং আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র। সেইভাবে পুরো কক্সবাজারটাকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করব।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

কক্সবাজার প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর