Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার আরও দুটি ভ্যারিয়েন্টে বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:৪০

করোনাভাইরাসের আরও দু’টি নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিউ নামক একটি ভ্যারিয়েন্ট। মিউ ভ্যারিয়েন্টটি প্রথম শনাক্ত হয় কলম্বিয়ায়। ইতিমধ্যে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভ্যারিয়েন্টটির বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬২১ (B.1.621)।

ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বুধবার নিয়মিত বুলেটিনে সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটির বিবর্তনের গতি দেখে মনে হচ্ছে, এটি ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে। যদিও এ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এখনও অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও জানানো হয় ওই বুলেটিনে।

এদিকে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম সি.১.২ (C.1.2)। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, নতুন এ ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা এবং ভ্যাকসিনের দ্বারা তৈরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাঙার সক্ষমতা উদ্বেগ সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনআইসিডি) এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাওয়াজুলু নাটাল ইনোভেশন অ্যান্ড সিক্যুয়েন্সিং প্লাটফর্মের (কেআরআইএসপি) বিজ্ঞানীরা এক যৌথ গবেষণার পর এ ভ্যারিয়েন্টের তথ্য প্রকাশ করেন। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলতি বছরের ২১ মে এ ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয়। করোনার নতুন এ ভ্যারিয়েন্টকে এখনও ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রাখা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর ভ্যারিয়েন্টটি কঙ্গো, মরিশাস ছাড়াও চীন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ডে পাওয়া গেছে।

২০১৯ সালের শেষ নাগাদ নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম A SARS-CoV-2। দ্রুত এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বছর না পেরোতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির একাধিক ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হয়। মূল ভাইরাসের চেয়েও এসব ভ্যারিয়েন্টের কয়েকটি মারাত্মক হয়ে উঠেছে।

মিউটেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এ ভ্যারিয়েন্টটি ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মহাতাণ্ডব ঘটিয়েছে এ ভ্যারিয়েন্ট। বর্তমানে এটি মূল ভাইরাসের মতোই বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনামসহ বহু দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী এ ভ্যারিয়েন্ট।

উল্লেখ্য যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তবে এর বেশিরভাগই তেমন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। যেসব ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা উচ্চ এবং ক্ষয়ক্ষতির ক্ষমতা বেশি সেগুলোকে নিয়েই বিজ্ঞানীরা অধিকতর গবেষণা করে থাকেন। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্টগুলোর গতিবিধি তদারকি করে থাকে।

বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্টগুলোকে তিনটি তালিকায় ভাগ করে থাকে। তালিকাগুলোর নাম হলো ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’, ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ এবং আরও পর্যবেক্ষণের জন্য মনোনীত তালিকা।

ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন
তুলনামূলক মূল্যায়নে করোনাভাইরাসের যেসব ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিম্নলিখিত এক বা একাধিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী সেগুলো এ তালিকাভুক্ত।

–যেসব ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অধিক বা কোভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিকর পরিবর্তন ঘটিয়েছে- বা

–যেসব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা অধিক বা রোগের উপসর্গে পরিবর্তন ঘটায়- বা

–যেসব ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিন, গণসচেতনতা বা চিকিৎসার বিদ্যমান ব্যবস্থাকে হার মানায় অথবা এতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন তালিকায় বর্তমানে ৪টি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে। এগুলো হলো আলফা, বিটা, গামা ও ডেল্টা।

  • আলফা
    এ ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৭ (B.1.1.7)। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্টটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন তালিকাভুক্ত করে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২১টি জিনোমিক মিউটেশনের মাধ্যমে ভ্যারিয়েন্টটি বর্তমান চরিত্র লাভ করেছে। সম্প্রতি এক গবেষণার দাবি, আলফা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির হার অধিক। তবে অপর কিছু গবেষণার দাবি, আলফা ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাস মহামারির গতি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখছে না।
  • বিটা
    এ ভ্যারিয়েন্ট ২০২০ সালের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৩৫১ (B.1.351)। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভ্যারিয়েন্টটিকে এ তালিকায় যুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিটা ভ্যারিয়েন্টে N501Y নামক একটি মিউটেশন রয়েছে যা এটির সংক্রামণ ক্ষমতা বা ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া এ ভ্যারিয়েন্টে E484K নামে আরেকটি মিউটেশন রয়েছে যা এটিকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তুলেছে।
  • গামা
    এ ভ্যারিয়েন্ট ২০২০ সালে ব্রাজিলে প্রথম শনাক্ত হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম পি.১ (P.1)। ২০২১ সালের ১১ জুন এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন তালিকায় যুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
  • ডেল্টা
    এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে করোনাভাইরাসের এ ভ্যারিয়েন্ট। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের মে মাসে এ ভ্যারিয়েন্টকে উদ্বেগের তালিকায় যুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭.২ (B.1.617.2)। চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় নামিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। বিশ্বের বহু দেশে করোনাকালীন ব্যবস্থাপনাকে তছনছ করে দিয়েছে এটি। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে সকল হিসাবনিকাশ পালটে দিয়েছে এ ভ্যারিয়েন্ট। গবেষকরা জানিয়েছেন, আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ডেল্টার ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। এছাড়া এটি করোনাভাইরাসের মূল ধরনের চেয়ে দ্বিগুন বেশি সংক্রামক।

ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট
জেনেটিক পরিবর্তনের সঙ্গে যেসব ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যগুলিকে প্রভাবিত করে, যেমন ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা, সংক্রমণের তীব্রতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব, চিকিৎসায় প্রভাব বিস্তার এবং গোষ্ঠী সংক্রমণে ব্যাপক ভূমিকা রাখা বা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া বা মহামারিবিদ্যায় প্রভাব ফেলতে শুরু করলে সেই ভ্যারিয়েন্টকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ তালিকায়ও চারটি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে।

  • ইটা
    ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ ভ্যারিয়েন্টটিকে এ তালিকায় যুক্ত করা হয়।
  • লোটা
    ২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এ ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের ২৪ মার্চ এটিকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৫২৬ (B.1.526)।
  • কাপ্পা
    কাপ্পা ভ্যারিয়েন্ট ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল কাপ্পা ভ্যারিয়েন্টটিকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভ্যারিয়েন্টটির বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭.১ (B.1.617.1)।
  • ল্যাম্বডা
    ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ ভ্যারিয়েন্ট পেরুতে শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের ১৪ জুনে ভ্যারিয়েন্টটিকে এ তালিকায় যুক্ত করা হয়। ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম সি.৩৭ (C.37)।
  • এমইউ
    এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো এমইউ ভ্যারিয়েন্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভ্যাকসিন প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার সক্ষমতা এ ভ্যারিয়েন্টের রয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্টের গতিবিধির দিকে নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সারাবাংলা/আইই

করোনা টপ নিউজ নভেল করোনাভাইরাস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর