দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধে এজেন্ট চায় পাসপোর্ট অধিদফতর
৩০ আগস্ট ২০২১ ২২:১৯
ঢাকা: পাসপোর্ট কার্যক্রমে দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধে এজেন্ট নিয়োগ দিতে চায় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদফতর। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে এজেন্ট নিয়োগের ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সংস্থাটি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
পাসপোর্ট অধিদফতর মনে করছে, অনেকে পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে পারেন না। তারা এসে দালালের খপ্পরে পড়েন। সেই সুযোগে দালালরা ইচ্ছে মতো টাকা লুটে নেয়। পাসপোর্ট প্রত্যাশীরাও অসহায় হয়ে টাকা দিতে বাধ্য থাকে। আবার দালালরা অবৈধ হওয়ায় কোনো অভিযোগ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাই এজেন্ট নিয়োগ করা হলে তারা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে। তাদের একটি ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেই ফি নিয়েই তারা কাজ করে দেবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের বাড়তি ফি গুনতে হলেও কারও প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট নিতে এসে বেশিরভাগ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েন। এদের মধ্যে অনেকেই ফরম পূরণ করতে পারেন না, কেউবা লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিতে চান না, আবার কেউ কেউ আগে পাসপোর্ট হাতে চান, ব্যাংকে টাকা জমা দিতেও জানেন না অনেকে, আবার কোন ভবনে কী আছে সেটাও অজানা অনেকের— এরকম নানান জনের নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ার অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়। আবার পুলিশ রিপোর্টের জন্য পুলিশের টাকা নেওয়ার বিষয়টিও জোড়ালোভাবে উঠে আসে। অনেক সময় টাকা দেওয়ার পরও পুলিশ রিপোর্ট সময় মতো পৌঁছায় না। এসব ক্ষেত্রে দালালরা সুযোগ নিয়ে থাকে। চাহিদা থাকায় বাড়তি টাকা দিয়েই পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন গ্রাহকরা। পাসপোর্ট নিতে গিয়ে কেউ পায়, আবার কেউ প্রতারণার শিকার হয়। অনেক সময় গ্রাহকরা নানান অভিযোগ করলেও দালালদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয় না। ফলে দালালদের ধরতে বেশিরভাগ সময় অভিযান চালাতে হয়।
এদিকে র্যাব সূত্র জানিয়েছে, পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে যে সকল দালালদের ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তারা কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে আসে। বের হয়ে আসা বেশির ভাগই ফের দালালি কাজে নেমে যায়। এমনও দেখা গেছে, একেকজন দুই থেকে তিন বার, এমনকি চারবারও গ্রেফতার হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাসপোর্ট করতে আসা অনেকেই জানেন না কীভাবে কী করতে হবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির লোক টাকার বিনিময়ে কাজ করে দিচ্ছেন। এতে কেউ পাসপোর্ট পাচ্ছেন, আবার কেউ প্রতারিত হচ্ছেন। দালালদের কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হলে অন্তত কেউ প্রতারিত হবে না। এজেন্টদের একটা নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তবে এ সুযোগ সবাইকে নিতে হবে এমনটা নয়। যারা নিজেরা সবকিছু করতে পারেন তারা নিজেরাই করবেন। কেউ চাইলে এজেন্টদের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সবকিছু করে নিতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের সময়ও এজেন্ট নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় ছিল। তবে সেটি পরবর্তীতে আর এগোয়নি। এখন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বন্ধ আছে। নতুন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।’
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদফতর গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় এজেন্ট নিয়োগ দিতে চায়। আবেদনে বলা হয়েছে, দালাল বন্ধে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করলে গ্রাহকরা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। যদিও গ্রাহকদের কিছু বাড়তি খরচ গুনতে হবে। তারপরেও দালালদের কেউ অনিয়ম করলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সহজ হবে। আবেদনপত্রটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় এটির অনুমতি দেওয়া হতে পারে।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম