জাপানি ২ শিশুর বিষয়ে ফয়সালা আদালতে
৩১ আগস্ট ২০২১ ০০:১২
ঢাকা: জাপানি দুই শিশুকে নিজ হেফাজতে রাখার অধিকার চেয়ে বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দ্বন্দ্বের ফয়সালা শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতে হবে। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুই শিশুকে হাইকোর্টে উপস্থিত করা হবে।
সোমবার (৩০ আগস্ট) রাত পর্যন্ত শিশু দুটির মা-বাবা নিজেদের হেফাজতে রাখার বিষয়ে একমত হতে পারেনি। তবে শিশুদের পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে বের করতে দু’পক্ষই একমত হয়েছেন।
শিশুদের নিজের হেফাজতে রাখার বিষয়ে বাবা-মায়ের একমত হতে না পারার বিষয়টি নিশ্চিত করেন শিশুদের মায়ের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিশুদের নিজেদের হেফাজতের রাখার বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কোনো সমাঝোতা হয়নি। আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আগামীকাল ৩১ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য ৭ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে।’
এর আগে, গত ২৩ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শিশু দুটিকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। এই সময়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন বলে আদেশ দেওয়া হয়।
আদালত সেইসঙ্গে ৩১ আগস্টের মধ্যে সমাঝোতায় পৌঁছানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুপক্ষই সন্তানের অধিকার প্রশ্নে অনড় থাকায় সমাঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি তারা। শিশুর অধিকার নিয়ে এমন জটিল মামলা আগে না আসায় শেষ পর্যন্ত এই আইনি সমীকরণের ফয়সালা দেশের সর্বোচ্চ আদালতেই হবে।
এর আগে, গত ১৯ আগস্ট দুই জাপানি শিশু এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। আদালতে শিশুদের মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং শিশুদের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
ওইদিন দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
গত ১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যা সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন ওই নারী।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। পরে তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছে- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। এরা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর এক দিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
শিশির মনির জানান, গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর হাইকোর্টে রিট করেন ওই জাপানি চিকিৎসক।
সারাবাংলা/কেআএফ/পিটিএম