ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ছাত্রলীগ জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে পারলে নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।
ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’ উল্লেখ করে সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই শিক্ষা শান্তি প্রগতি- এই আদর্শ নিয়েই ছাত্রলীগকে তৈরি হতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুধ হতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগকে, দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যখন যেটা করতে বলেছি তারা করেছে।’
১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্ররাজনীতিতে কলুষিত করার তৎকালীন সেনাশাসক ও সরকারদের ভূমিকার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বা এরপরে এরশাদ, তারপরে খালেদা জিয়া তারা কি করেছে? তারা তো ছাত্রসমাজকে ধ্বংস করতে চেয়েছে।এ জাতি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক, এটা তারা কখনও চায়নি।’
‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস’ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সংগঠনের নেতাকর্মীদের। তিনি বলেন, ‘এইটুকু বলব, জানি না এই দেশের মানুষ বিচিত্র একটা চরিত্রের কেন? কিন্তু আদর্শ নিয়ে যদি নিজেদের গড়ে তুলতে পার। নিশ্চয়ই জাতির পিতার যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য তোমরা ছাত্রলীগ ভবিষ্যতে পূরণ করতে পারবা। দেশকে ভবিষ্যতে কিভাবে পরিচালনা করার প্রয়োজন, কিভাবে করতে হবে, আমি কিন্তু তার কাঠামোগুলি একে একে তৈরি করে রেখে গেলাম। সেই ২১০০ সাল পর্যন্ত কিভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত সমৃদ্ধ হবে।’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মর্যাদার পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ধরেই রেখেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। জাতির পিতার ত্যাগ-তিতিক্ষা বা সারা বাংলাদেশে তার আদর্শের সৈনিক তাদের যে ত্যাগ-তিতিক্ষা এটা কখনো বৃথা যেতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না, বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। আর তোমরা এই প্রজন্ম, তোমরা আধুনিক বাংলাদেশ পেয়েছো। ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছো। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই করোনাভাইরাসের সময়ও তোমাদের সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। তোমাদেরকে এই দেশকে ভবিষ্যতে গড়ে তোলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।’
জাতির পিতা আদর্শ নিয়ে পথচলার প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমরা তার আদর্শ নিয়েই চলেছি এবং এখনো চলছি। তোমরাও সেইভাবে চলতে চেষ্টা করবে। কারণ পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতাটাকে ভোগের বস্তু হিসাবে নিয়েছিল। জনগণকে অবহেলা করেছে। কিন্তু এই জনগণের জন্যই কিন্তু আমাদের রাজনীতি।’
আমাদের পথ মসৃণ না, পায়ে পায়ে শত্রু আছে: শেখ হাসিনা
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান।
মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের নিহত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রকাশনা পত্রিকা ‘মাতৃভূমি এবং জয় বাংলা’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় শোক উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হলো।