৪ মাস পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত কাপ্তাই হ্রদ
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:১৫
রাঙ্গামাটি: দীর্ঘ চার মাস রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে নিষেধাজ্ঞা শেষে পুনরায় শুরু হচ্ছে মাছ ধরা। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা থেকে হ্রদে জাল নিয়ে নামবেন চার মাস অলস বসে থাকা জেলেরা। এদিকে হ্রদে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় আবারও কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। এ বছরও নিষেধাজ্ঞার সময় তিনমাস দেওয়া হলেও হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় তিন দফায় আরও এক মাস হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেরা প্রতিমাসে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য হিসেবে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা পান। তবে এবার নিয়ম অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার তিন মাসে জেলেরা খাদ্য সহায়তা পেলেও বাড়তি এক মাসের জন্য কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সূত্র জানায়, গত বছরও কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধের সময় পানি না বাড়ায় ১ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিন নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এ বছর ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে পানিস্বল্পতার মধ্যেই মাছ ধরা শুরু হয়ে যায়। এতে করে মৌসুমের শুরুর দিকে মাত্রা অতিরিক্ত মাছ ধরা হলেও শেষের দিকে হ্রদে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। এতে করে ভাটা পড়েছে বিএফডিসির বার্ষিক মাছ আহরণ ও অবতরণের রেকর্ডে।
বিএফডিসি’র বার্ষিক হিসাব মতে, কাপ্তাই হ্রদ হতে বিএফডিসি’র অবতরণকেন্দ্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত হাজার ৬৭২ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সাত হাজার ৯৮১ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আট হাজার ১২৩, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আট হাজার ৪২৩ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে আট ৫৪৯ টন মাছ অবতরণ করা হয়। সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে অবতরণ হয়েছে ছয় হাজার ৭৯৪ টন। এবছরও যদি গত মৌসুমের মতো মাত্রা অতিরিক্ত মাছ আহরিত হয়, তাহলে মৌসুমের শেষের দিকে মাছ আহরণে ভাটা পড়বে।
বিএফডিসি’র রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রের সহকারী বাজারজাতকরণ কর্মকর্তা মো. শোয়েব সালেহীন জানান, দীর্ঘ চার মাস পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকেই বিএফডিসি’র নিজস্ব পন্টুনগুলোতে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। সেখান যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করা হবে।
তিনি আরও জানান, স্বাভাবিক সময়ের হিসাবে কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ১০৫ এমএসএল (মিন সি লেভেল) হলে মাছ ধরা শুরু হয়। কিন্তু এ বছরও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে নির্ধারিত তিনমাস সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় তিন দফায় আরও একমাস সময় বৃদ্ধি করা হলেও হ্রদে এখনো আশানুরূপ পানি বাড়েনি। বর্তমানে হ্রদের পানির পরিমাণ ৯৮ দশমিক ০৪ এমএসএল, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ এমএসএল কম। কিন্তু জেলে ও ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও নানা দিক বিবেচনা করে পানিস্বল্পতার মধ্যেই হ্রদে মাছ ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এনএস