Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহামারির এই সময়ে মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বাবার অংশগ্রহণ জরুরি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ আগস্ট ২০২১ ১৫:০৬

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির সময়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যসেবার সংকট আরও গভীর হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি সে সংকট আরও গভীর করে তুলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন গর্ভধারণকারী মায়েরা। তাই এই সময়ে মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বাবাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

সোমবার (৩০ আগস্ট) করোনাকালে মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও এই সময়ে বাবাদের দায়িত্বের বিষয়টি ওঠে এসেছে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে।

বিজ্ঞাপন

‘করোনাকালে মাতৃস্বাস্থ্য এবং বাবার দায়িত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)। এই ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন।

বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ঝুঁকি, মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের বাবা ও পরিবারের দায়িত্ব, মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব এবং করোনাকালে প্রসূতি-সেবার সংকটগুলো প্রাধান্য পায় এই ওয়েবিনারে।

ওয়েবিনারে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুরাদ আহমেদ।

ডা. মুরাদ আহমেদ বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে মাতৃমৃত্যুর হারকে বাড়িয়ে দেয়। ১৯ বছরের আগেই ৫৯ শতাংশ মেয়ে গর্ভধারণ করে। এক তৃতীয়াংশ নারী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। প্রতি ৫ জনে ৩ জন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে মাত্র ১ জন এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে। ২৪ শতাংশ নারীর একলামশিয়ায় মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীরা গর্ভকালে এমনিতেই অপুষ্টিতে ভুগেন। এর সঙ্গে করোনাকালে যোগ হয়েছে বাল্যবিবাহের বাড়তি ঝোঁক। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের ভাবতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে, মায়েরা এখন চাইলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে পারছেন। সর্বোপরি মাতৃত্ব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া চলবে না।

ওয়েবিনারে প্রসবের আগে যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে না যাওয়ায় দেশে ৫৪ শতাংশ নারীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা অধিকাংশ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয় তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। প্রসবকালীন ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার ফলে দেশে মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশ ঘটে বাড়িতে।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালে মায়েদের সেবা কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে। পরিবার ও সন্তানের বাবার সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের এখন এক সামাজিক যুদ্ধে নামতে হবে।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যার প্রতি আলোকপাত করেন শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ।

তিনি বলেন, করোনা ও লকডাউনের কারণে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি যেমন বাবারা কর্মহীন হওয়ায় তারা সন্তানের মায়ের যথাযথ যত্ন নিতে পারছেন না। মাতৃস্বাস্থ্যের গুরুত্বের বিষয়টি এই সময়ে আরও বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাবাদের উচিত মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের মায়েদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া ও মায়েদের কাজগুলো ভাগ করে নেওয়া। একইসঙ্গে মা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বাবাকে ভাবতে হবে। কোভিড-১৯ সময়ে এ বিষয়টিও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইউসিএল’র করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান শামীমা আক্তার বলেন, করোনাকালে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা ও মায়ের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার কথা ভেবেই বিএইচআরএফ’কে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই ওয়েবিনারের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া, মাতৃদুগ্ধপান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও উৎসাহ তৈরি করতে ‘হরলিক্স মাদার’স প্লাস’ ইতোমধ্যে মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে।

তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে আমাদের এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

ওয়েবিনারে সঞ্চালনা করেন বিএইচআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বি। মাতৃস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ওয়েবিনার আয়োজন করায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ তার বক্তব্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।

সারাবাংলা/এসবি

ডা. মুরাদ আহমেদ ডা. শফি আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম বিএইচআরএফ বিএসএমএমইউ মাতৃস্বাস্থ্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর