Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যমুনায় বাড়ছে পানি, ভাঙছে স্বপ্ন

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:২৫

সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার পানিবন্দি হাজার মানুষ এখন দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। শুধু তাই নয়, এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও তীব্র গো-খাদ্য সংকটও। বন্যা কবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন, সবজি, আখ, বীজতলা ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি, ফুলজোড়, হুড়াসাগর ও বড়াল নদীর পানিও বাড়ছে। সব নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ফসলের মাঠগুলো তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে রয়েছেন দুর্গতরা। বন্যা কবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজি বাগানসহ বিভিন্ন ফসল।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি বাড়ার ফলে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন অব্যাহত থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। ভীতিও কাজ করছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। মানুষজন গবাদি পশু ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন দূরের কোনো আত্মীয়ের বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন কোনোরকমে বাঁচাতে পারলেও গবাদি পশুর আশ্রয় ও খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুকনো জ্বালানি কাঠের অভাবে গৃহিণীরা পড়েছেন বিপাকে। খোলা আকাশের নিচে খরকুটো দিয়ে কোনোমতে রান্নার কাজ করছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের রানীগ্রাম এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বসতবাড়ি একেবারেই তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলা পানি। কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারিনি। কয়েকটি টিন খুলে এনে ওয়াপধা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। একই গ্রামের সখিতন ভেওয়া, শীলা খাতুন, আফজাল হোসেন জানান, ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো জায়গা নেই। তাই ওয়াপদার বাঁধে পলিথিন টাঙিয়ে কোনোরকম জীবযাপন করছেন তারা। বৃষ্টির কারণে সময় মতো রান্নাও করতে পারছেন। ফলে তাদের অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কাজিপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই ইউনিয়নের ডিক্রিদোরতা গ্রাম ও জিআরডিপি নৌকাঘাট পয়েন্টে ব্যাপক আকারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে বেশকিছু বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি ও নতুন স্থাপন করা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানি বাড়বে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে।’

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ সারাবাংলাকে জানান, গত কয়েকদিনে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের ৪ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমন, বোনা আমন, আগাম সবজি, আখ, বীজতলা ও বাদাম।

সিরাজগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্যাকালীন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সাড়ে পাঁচশ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা মজুত রয়েছে। এছাড়াও উপজেলাগুলোতে মোট ১২৫ টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

তবে জেলায় এ পর্যন্ত কত হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/পিটিএম

ভাঙছে স্বপ্ন যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর