মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:৫৯
ঢাকা: চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ আছে কি না, সেটি প্রমাণের জন্য যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্লেল হক, সেটি প্রত্যাখান করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দেওয়াটাকে আমরা নিকৃষ্টতম কাজ মনে করি। জাতির দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ঘোষক বীর উত্তম শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলা হয়। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী প্রমাণ করুক, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধাবার (১ সেপ্টম্বর) চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘ ৪৩ বছরে বাংলাদেশে রাজনীতিতে কতকগুলো মৌলিক অবদান রেখেছে। একদলীয় স্বৈরশাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এবং পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম গভর্নমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারিয়ান ফর্ম গভর্নমেন্টে আসছে।’
‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ফলে বাকস্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল, সেগুলোকে জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ দেশে সম্পূর্ণ বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে মূল কাঠামো, সেই কাঠামো তিনি নির্মাণ করেছিলেন। একইসঙ্গে অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এনেছিলেন। বদ্ধ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে মুক্ত বাজার অর্থনীতির সূচনা করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতির যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তার মূলভিত্তি জিয়াউর রহমানের হাতে স্থাপিত হয়েছিল’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা যখন হত্যা করেছিল, তখন সবাই ভেবেছিলেন বিএনপি বোধ হয় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তার যোগ্য উত্তরাধিকারী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্বের পতাকা তুলে ধরেছিলেন এবং ৯ বছর আপসহীনভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দুর্ভাগ্য এই জাতির, আজ সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলার কারণে কারাবন্দি হয়ে আছেন, গৃহবন্দি হয়ে আছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতি আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অধিকারগুলো পেয়েছিল, সেই অধিকারগুলোকে তারা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, নির্বাচন হয় না, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পুরো প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে, বিচারবিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সার্বিক অর্থে ছদ্মবেশি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এই ৪৩ বছর সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। সংগ্রাম লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই ৪৩ বছর পার করে ৪৪ বছরে পড়েছে। এখন বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং গণতন্ত্রের নেতা আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।’
‘আমাদের লজ্জা হয়, দুঃখ হয়। আজকে আমরা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের মাজারে যখন আমরা আসি, তখন আমাদেরকে বাধা দেওয়া হয়, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানো হয়, গুলি বর্ষণ করা হয় এবং আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘এবারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এমন জৌলুসহীন কেন?’—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আসতে দেওয়া হয়নি। সরকার বাধা দিয়েছে। ৩০ জনের বেশি আসা যাবে না বলে তারা জানিয়ে দিয়েছে। এটা (চন্দ্রিমা উদ্যান) নাকি তাদের কন্ট্রোলের মধ্যে নেই। আরও বেশি নিরাপত্তার মধ্যে চলে গেছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজকে দেশ যে অবস্থায় আছে, এটা দেখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটা মুক্ত, স্বাধীন, অবাধ, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক দেশের জন্য। যেখানে মানুষ দুই বেলা দুই মুঠো খেতে পারবে, সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা হবে, রোগ হলে চিকিৎসা পাবে। যেখানে তাদের ভোটাধির থাকবে, গণতন্ত্র থাকবে এবং তারা একটা সভ্য, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদার সাথে জীবন ধারণ করবে। দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে সেই অবস্থা বাংলাদেশে উপস্থিত নাই। আমরা সেই অবস্থা কায়েমের জন্যই চেষ্টা করছি।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, নির্বাহী সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ