পৃথিবীর ৩০ শতাংশ প্রজাতির গাছ বিলুপ্তির পথে
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:০৮
পৃথিবীর অন্তত ৩০ শতাংশ প্রজাতির গাছ বিলুপ্তির পথে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ওক ও ম্যাগনোলিয়ার মতো সুপরিচিত বৃক্ষ থেকে শুরু করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের গাছ এই হুমকিতে রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৭ হাজার ৫০০ প্রজাতির গাছ হুমকিতে রয়েছে। একইসঙ্গে এর চেয়ে দ্বিগুণ প্রজাতির প্রাণীও রয়েছে হুমকির মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতে বনভূমি ধ্বংস, কাঠের জন্য গাছ কাটা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট হুমকি থেকে গাছের প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করার জন্য আবেদন জানিয়েছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ গোষ্ঠীগুলো।
লন্ডনের কিউ’এ অবস্থিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান বোটানিক গার্ডেন কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনালের ডা. মালিন রিভার্স বলেছেন, ‘আমাদের গ্রহে প্রায় ৬০ হাজার প্রজাতির গাছ রয়েছে। আর প্রথমবারের মতো আমারা জানতে পারলাম কোন প্রজাতিগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের জন্য বড় হুমকি কী এবং তারা কোথায়।’
গ্লোবাল ট্রি স্পেশালিস্ট গ্রুপ অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার’র কো-চেয়ার সারা ওল্ডফিল্ড বলেন, একটি সুস্থ বিশ্বের জন্য আমাদের বৈচিত্রময় প্রজাতির গাছগুলো প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি প্রজাতির পরিবেশে আলাদা আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের মোট সংখ্যার ৩০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। আমাদের দ্রুতই এসব সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ট্রিস’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পৃথিবীর ৬০ হাজার পরিচিত গাছের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার মুখোমুখি।
ইতোমধ্যে বন থেকে ১৪২টা প্রজাতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর ৪৪২টা বিলুপ্তির দোরগোড়ায়। এগুলার একেকটা ৫০টারও কম গাছ আছে।
পৃথিবীতে যেসব কারণে গাছগুলো ধ্বংসের মুখে রয়েছে তার মধ্যে চাষাবাদ অন্যতম, এজন্য ২৯ শতাংশ প্রজাতির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও কাঠ সংগ্রহের জন্য ২৭ শতাংশ, গবাদিপশুর চাষাবাদের জন্য ১৪ শতাংশ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য ১৩ শতাংশ এবং অগ্নিকাণ্ডের জন্য ১৩ শতাংশ প্রজাতির গাছ বিলুপ্ত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, বৈরি আবহাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি গাছের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি সৃষ্টি করেছে। তবে সংরক্ষণ করার মাধ্যমেই নিরাপদ ভবিৎষ্যত দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
ড. রিভার্স বলেছেন, এই প্রতিবেদন আমাদের দেখায় যে, এ বিষয়ে সংরক্ষণ গোষ্ঠী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংঘবদ্ধ করা। যাতে করে ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতিগুলোকে সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
বিলুপ্ত হওয়ার হুমকিতে থাকা প্রজাতিগুলোকে রক্ষায় বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো-
১. বিদ্যমান বনাঞ্চল রক্ষা করা এবং সংরক্ষিত এলাকার সম্প্রসারণ (সংরক্ষিত এলাকাগুলোতে এখনো ৬৪ শতাংশ প্রজাতির গাছ পাওয়া যেতে পারে)।
২. হুমকিতে থাকা প্রজাতিগুলোকে বোটানিকাল গার্ডেন বা বীজ ব্যাংকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা, যাতে কোনো একদিন তাদের আবারও বনে লাগানো যেতে পারে (বর্তমানে ৩০ শতাংশেরও বেশি গাছ এভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে)।
৩. বৈজ্ঞানিকভাবে বৃক্ষ রোপণ ও পূর্ণবাসনের জন্য জনসাধারণকে শিক্ষা দেওয়া। যাতে করে সঠিক জায়গায় সঠিক গাছ লাগাতে পারে, এর মধ্যে বিরল ও হুমকিতে থাকা প্রজাতিগুলো রয়েছে।
৪. বৃক্ষ সংরক্ষণের জন্য অর্থের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
সারাবাংলা/এনএস