Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পঁচাত্তরের মাথাপিছু আয় পেরোতে পারেননি জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:০৫

ঢাকা: দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়াতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যে সাফল্য দেখিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতা পরবর্তী সরকারগুলো ধরে রাখতে পারেনি। যে কারণে পঁচাত্তর সালে দেশের মানুষের যে মাথাপিছু আয় ছিল, পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকার সেই আয় পেরোতে পারেনি। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সেই বেঞ্চমার্ক মাথাপিছু আয় অতিক্রম করে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু সরকার মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়কে তিন গুণে উন্নীত করেছিল। এমন নজির বিশ্বে বিরল।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাতে এক গবেষণার বরাত দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘মাথাপিছু আয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের যুগান্তকারী সাফল্য: গবেষণা ফলাফল প্রকাশনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ৯ পৃষ্ঠার এই গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।

গবেষণাপত্রের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, জাতির পিতার সুদৃঢ় নেতৃত্ব, অসীম সাহসিকতা ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছিল। ১৯৭২ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৪ মার্কিন ডলার। ১৯৭৫ সাল নাগাদ সেটি ২৭৮ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে কোনো দেশের মাথাপিছু আয় তিন গুণ বৃদ্ধির নজির পৃথিবীতে বিরল।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, ১৯৭৩ সালে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ২৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ১৯৭২ সালের ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ঋণাত্মক হার বিবেচনায় ১৯৭৩ সালে প্রকৃতপক্ষে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৫৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ১৯৭৪ সালে এই হার ছিল ৫২ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ১৯৭৫ সালে বৃদ্ধির হার ছিল ৫২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ের এই বৃদ্ধির হার কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, পৃথিবীর হাতেগোনা কয়েকটি দেশে এমনটি ঘটেছিল। তবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের সঙ্গে ওই দেশগুলোর তুলনা প্রযোজ্য নয় এই জন্য যে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি সব দেশেই ‘windfall gain’-এর কারণে মাথাপিছু আয়ের এই উল্লম্ফন হয়েছিল। ওই দেশগুলোতে মাথাপিছু আয় বাড়াতে সরকারের নিজস্ব সাফল্য কম।

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু সরকারের ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলারের মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চমার্ক অতিক্রম করেছে শেখ হাসিনা সরকার। ২০২১ সালে এসে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলার। পঁচাত্তরে মাথাপিছু আয়ের হিসাবে বঙ্গবন্ধু সরকার দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশসহ চীনকেও পেছনে ফেলেছিল। একইভাবে শেখ হাসিনা সরকারও ২০২১ সালে এসে বাংলাদেশকে ফের দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রাহমানের সভাপতিত্বে গবেষণা ফলাফল প্রকাশনার সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ।

গবেষণাপত্রে দেখানো হয়, ১৯৭৫ সালে যখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৮ ডলার, তখন ভারতের মাথাপিছু আয় ছিল ১৫৮ ডলার, পাকিস্তানের ১৬৮ ডলার, শ্রীলংকার ২৭৬ ডলার, নেপালের ১১৭ ডলার, আফগানিস্তানের ১৮৭ ডলার ও চীনের ১৭৮ ডলার। অর্থাৎ চীনের মাথাপিছু আয়ও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের চেয়ে ১০০ ডলার কম ছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হারের এমন রেকর্ড দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ এখনো ভাঙতে পারেনি। এমনকি চীনও বঙ্গবন্ধু সরকারের এই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি।

গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে, বঙ্গবন্ধু সরকারের পরের সরকারগুলো মাথাপিছু আয়ের এই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। কেননা পঁচাত্তরের ২৭৮ ডলার মাথাপিছু আয়ের পর জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ বছরের শাসনামলের শেষ বছর ১৯৮১ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ২৪৮ ডলার, যা জিয়া সরকারের সর্বোচ্চ। অথচ ডলারের মূল্যমান ও মূল্যস্ফীতি এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের (৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ) ১০ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলেও এটি হওয়ার কথা ছিল ৫৬০ ডলার।

এদিকে, এরশাদের শেষ আর্থিক বছর ১৯৯০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৩০৬ ডলার। এটি এরশাদ সরকারের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর ২৭৮ ডলারের বেঞ্চ মার্ক অনুযায়ী ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু থাকা উচিত ছিল ৬৭৫ ডলার। আর বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের ১০ ভাগের এক ভাগ ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলেও ১৯৯০ সালে এটি হওয়ার কথা ছিল ৮৮৩ ডলার।

খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদ শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৩২৯ ডলার। এটি তার প্রথম মেয়াদের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর ২৭৮ ডলারের বেঞ্চ মার্ক অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ৮০১ দশমিক ৮৬ ডলার। এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের ১০ ভাগের এক ভাগ বা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরলে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ১ হাজার ৮০ ডলার।

খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫১০ ডলার। এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর ২৭৮ ডলারের বেঞ্চ মার্ক অনুযায়ী ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ১ হাজার ৫৪ ডলার। এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের ১০ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ১ হাজার ৪৮৫ ডলার।

গবেষণায় দেখানো হয়, জাতির পিতার সরকারের ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলারের বেঞ্চমার্ক স্পর্শ করতে পেরেছিলেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা, ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনের মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলার ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩৯৫ ডলারে। এর সঙ্গে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ ধরলে সেটি হয় ২ হাজার ৩৪ ডলার। তবে ২০২১ সালে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলেরে উন্নীত করেছে।

গবেষণায় দেখানো হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার একবারই ৯ শতাংশ অতিক্রম করেছিল, সেটি ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সরকারের সময়। ওই বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জাতির পিতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ অতিক্রম করেছিল একবারই— ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে। ওই বছর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, একটি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। আসলে এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনা পারের এই অঞ্চলটি বা দ্বীপ অঞ্চলটি কোনোদিনই একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র ছিল না, কোনোদিনই স্বশাসিত ছিল না। এটি দীর্ঘদিন পাঠান, মোঘল, পরবর্তীতে ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর এবং শেষে, পাকিস্তানি, জমিদার, সামন্ত প্রভুরা, ও সামরিক-বেসামরিক আমলারা বাংলাদেশকে শাসন করেছে, শোষণ করেছে। এর ফলে কৃষক-শ্রমিক যারা সকাল-সন্ধ্যা কঠোর পরিশ্রম করেছে, যাদের ঘামে, রক্তে সোনালি ফসল জন্মেছে, তারা চিরদিনই অর্ধাহারে, অনাহারে থেকেছে, কষ্ট করেছে এবং তারা সবসময় বঞ্চিত থেকেছে। বঙ্গবন্ধু তার কৈশোরেই এই মানুষগুলোর বঞ্চনা দেখেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা জুড়ে ছিল কৃষি, কৃষকের কল্যাণ ও মানুষের কল্যাণ।

ড. মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শনের প্রধান তিনটি দিক হলো— গভীর গণতান্ত্রিক মানবতা, মানুষের মর্যাদা এবং দেশকে চেনা ও গভীর দেশপ্রেম। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছিল সবচেয়ে বড় দল, তারপরই কৃষক প্রজা পার্টি। যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সমর্থন করেছিল, মূলত সেই দেশপ্রেমিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে একটি নতুন দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করা হয়। তাতে শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজকেও প্রশাসনে সম্পৃক্ত করা হয়। কেবল মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের স্থান সেখানে ছিল না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে অভূতপূর্ব উন্নতি হয় দেশের। দেশদ্রোহীদের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর নেমে আসে অরাজকতা। দিকনির্দেশনাহীন প্রশাসন দেশের কোনো মঙ্গল করতে পারে না। বঙ্গবন্ধু যে উন্নয়ন শুরু করেছিলেন, তা থমকে যায়। জনগণের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ফের উন্নয়নের ধারা ফিরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে ধারা নতুন গতি পায়। বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের যে ধারা সূচনা করেছিলেন তাতে যদি বিরতি না পড়ত, তাহলে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে আরও উন্নত পর্যায়ে থাকত।

ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় আয় হিসাব পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। ২০০৮ সালে ওই পদ্ধতি সংশোধিত হয়। এর ফলে তথ্য-উপাত্তের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে আলাপ করে এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। জনগণ, তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির বক্তব্য প্রামাণ্য হিসেবে মেনে নিবে।

ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু কীভাবে অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি অর্থনীতি, যেটি একেবারেই বিধ্বস্ত ছিল, কৃষি-শিল্প সব বিধ্বস্ত-বন্ধ— সেই অর্থনীতিকে বঙ্গবন্ধু টেনে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছেন সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করে। প্রথমে তিনি বলেছেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। দুঃখী মানুষ কারা, যারা বঞ্চিত। সেই বঞ্চনার কথা, মুক্তির কথা তিনি ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বঙ্গবন্ধু সরকার মাথাপিছু আয়

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর