Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিপিএন ছাড়াই খেলা যাচ্ছে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:০৩

ঢাকা: আদালতের নির্দেশের পর দেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে দেশে গেম দুটি এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ছাড়া মোবাইল ইন্টারনেট থেকে গেম দুটি খেলা না গেলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থেকে হরহামেশাই খেলা যাচ্ছে। আবার অনেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থেকেও ভিপিএন ছাড়া গেম দুটি খেলতে পারছে না। সবমিলিয়ে দেশে গেম দুটি খেলা একেবারে বন্ধ হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে প্রফেশনাল পাবজি গেমার গোলটু (সাদমান) সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রফেশনালি বাংলাদেশ থেকে পাবজি গেম খেলা এখন পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। পিএমসিও’র টুর্নামেন্ট চলছিল। হাইকোর্ট থেকে রায় আসার পর আমরা এই ইভেন্টে অংশ নেওয়া থেকে বিরত আছি। হাইকোর্টের রায়ের পর তো আমরা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে কোনো আন্তর্জাতিক গেম ইভেন্টে অংশ নিতে পারি না। তবে সাধারণভাবে যারা গেম খেলে তারা হয়তো খেলছে। কিন্তু নরমাল ওয়েতে খেলা যাচ্ছে না। সব আইএসপিএ হোল্ডার হয়তো আইপি লিংক ব্লক করতে পারিনি। তাই অনেকেই হয়তো ওয়াইফাই ব্যবহার করে গেম খেলতে পারছে। তবে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে এই গেমের কোনো কার্যকারিতা নেই।’

বিজ্ঞাপন

মিরপুরের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী তৌসিফ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে ইনস্টল করে খেলতে হয়। এসব গেম খেলতে ইন্টারনেট প্রয়োজন পড়ে। এখন ৩০০ এমবির নিচের গেম খেলতেও ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব গেম ৭ থেকে ৮ জিবি। এ কারণে গেমের পুরোটাই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। দেশে এসব গেম আসলে ব্যান করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশি সার্ভার ব্যবহার করে খেললে এখন শুধু শব্দ শোনা ও কথা বলা যায় না। যারা বড় বড় টুর্নামেন্টে বা অন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিত, গেম বন্ধ করায় কেবলমাত্র তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখনও দেশ থেকে ভিপিএন ব্যবহার করে গেমগুলো খেলা যাচ্ছে।’

ময়মনসিংহের একজন গেমার নাইম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই দিয়ে ভিপিএন ছাড়াই পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম খেলা যাচ্ছে। তবে মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে ভিপিএন ছাড়া গেম খেলা যাচ্ছে না।’

সেগুনবাগিচার বাসিন্দা পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার গেমার ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও মোবাইল থেকে পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার গেম খেলা যাচ্ছে। তবে সব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে খেলা যায় না। গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করে এসব গেম খেলা যাচ্ছে না। ব্রন্ডব্যান্ডের কিছু কিছু ওয়াইফাইয়ে খেলা যায়, আবার কোনো কোনোটায় খেলা যায় না। সেসব ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করতে হয়।’

আরও পড়ুন:

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইআইজির পক্ষ থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ করতে সবগুলো লিংক ব্লক করা হয়েছে। আইপি এড্রেস প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তবে আইপি এড্রেস প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হয়। এ কারণে অনেকেই নতুন আইপি দিয়ে ঢুকে যায়। ফলে অনেক সময় ভিপিএন ছাড়াই এসব গেম খেলা যাচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে।’

এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের (ডট) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব গেম বন্ধে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। সেটা প্রতিপালন হয়েছে। কিছু টেকনিক্যাল কারণে হয়তো ভিপিএন ছাড়াও গেমগুলো খেলা যাচ্ছে। আমরা শুনেছি আইআইজিপি বা আইএসপিবির যে ক্যাশ সার্ভার আছে সেখান থেকে বাইপাস হয়ে গেমগুলো খেলা যাচ্ছে। অনেকটা চোরাইপথ দিয়ে ঢোকার মতো। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখন আর এসব গেম খেলা যাচ্ছে না।‘

জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধে বিটিআরসি কাজ করছে। কিন্তু এখন যেটা খেলা যাচ্ছে সেটা ভিপিএনের মাধ্যমে। ভিপিএন বন্ধ করা যাবে না। এর সঙ্গে অনেক আর্থিক বিষয় জড়িত। ফ্রিল্যান্সাররা ভিপিএন ব্যবহার করে কাজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ভিপিএন বন্ধ করতে গেলে প্লে স্টোরসহ গুগলও বন্ধ করতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। তারপরও আমাদের লোকজন গেম দুটি পুরো বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমস্ত আইআইজি ও আইএসপিকে বলা হয়েছে গেম দুটি বন্ধ করতে। আমাদের জানামতে ভিপিএন ছাড়া গেম দুটি খেলা যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যদি এসব গেম খেলা যায়, তবে তা বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। কোনো আইআইজি বা আইএসপি নেটওয়ার্কে যদি এটি হয়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয়তো কেউ ব্যান্ডউইথ বাড়িয়ে দেওয়ায় বাইপাস করে এসব গেম খেলা যাচ্ছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তা হতে দেব না।’

সম্প্রতি, আসক্তিতে ডুবে থাকা তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারসহ এ ধরনের ‘বিপজ্জনক’ সব গেম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে এ আদেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে রুলও জারি করা হয়েছে। আর আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর এসব গেম বন্ধের নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

পাবজি ফ্রি ফায়ার ভিপিএন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর