শুধু মেট্রোরেল নয়, গণপরিবহনেও সংস্কার দরকার
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:৫১
ঢাকা: সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম মেট্রোরেল। টানা পাঁচ বছর নির্মাণ যজ্ঞ চালিয়ে গত রোববার (২৯ আগস্ট) মেট্রোরেল লাইনে সফল পারফরমেন্স করলেও যাত্রী পরিবহনে সময় লাগবে আরও এক বছর। মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর যানজট কমে যাবে; এমন কথা বলা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনে সংস্কার আনা না হলে কোনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্মত পরিবহনই যানজট নিরসনে কাজে আসবে না।
রাজধানীর যানজট নিরসনের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিক ও উন্নত করতে ২০১৬ সালে সরকার হাতে নেয় মেট্রোরেল প্রকল্প। যা এরই মধ্যে দৃশ্যমান। মেট্রোরেলের সক্ষমতা অনুযায়ী ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আনা নেওয়া করতে পারবে। এতে করে গাড়ির ওপরে চাপ কমবে বলে মনে করছেন অনেকে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সেদিন মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর যানজট কমে আসবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহন ব্যবস্থায় সমন্বয়ের পাশাপাশি সংস্কার আনা না গেলে যানজট কমবে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সড়ক পরিবহনখাত এখন এমন হয়েছে যে, কর্মকর্তাদের প্রকল্প ব্যবস্থাপনার চেয়ে বাস্তবায়নে আগ্রহ বেশি। যানজট নিরসনে এ পর্যন্ত সরকার অনেকগুলো ফ্লাইওভার বানিয়েছে, সংযোগ সড়কও কিছু করা হয়েছে। কিন্তু মানুষের সহজ যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। ফলে এ সকল উদ্যোগে ছোট গাড়িগুলোর লাভ বেশি হয়েছে। ফ্লাইওভার, রাস্তা চওড়া করার পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাসগুলোকে সকলের চলাচলের উপযোগী করা, ফুটপাতকে পথচারীবান্ধব করা, সর্বোপরি গণপরিবহন সম্পর্কিত কৌশলপত্রে যে পরিকল্পনা ছিল, তার কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি।’
ড. শামসুল হক বলেন, ‘বিশৃঙ্খল গণপরিবহনের কারণে রাস্তায় যানজট থেকে শুরু করে সব ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। একসময় ঢাকায় গাড়ির গতি নির্ধারণ করা ছিল ২৫ কিলোমিটার। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই গতি কমছে। এখন ঘণ্টায় গতিবেগ মাত্র ৭ কিলোমিটার। তারপরেও আগের চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এর জন্য তিনি পরিবহন সেক্টরে জিইয়ে থাকা বিশৃঙ্খলাকেই দায়ী করছেন।
মেট্রোরেলের যে লাইনের কাজ এখন চলছে, সেটির নাম মেট্রোরেল রুট বা এমআরটি লাইন-৬। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত এই লাইনের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। স্টেশন থাকবে ১৭ টি।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএল এর সবশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৬৮.৪৯ শতাংশ। এরমধ্যে মেট্রোরেল রুট-৬ প্রথম পর্যায়ে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপক এ বি এম আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার শেষ করে যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই অংশে মেট্রোরেল চালু করতে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন হবে। পুরো ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার লাইন পুরোপুরি চালু করা হলে বাসের ওপরে কিছুটা হলেও চাপ কমবে।
এ প্রসঙ্গে ড. শামসুল হক বলেন, রাজধানী ঢাকা দিনের পর দিন যে পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, বিশেষ করে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার দিক থেকে; তাতে ঢাকাকে বাঁচানোর শেষ উপায় ছিল মেট্রোরেল। মেট্রোরেল এমন একটা পরিবহন যে হবে আরামদায়ক, সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সিটিগুলোর দিকে তাকালেও দেখবো মেট্রোরেল একটি স্মার্ট গণপরিবহন। এই বিষয়টি ঢাকার জন্য নয়। কারণ ঢাকা সিটিকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করতে হলে মেট্রোর পাশপাশি গণপরিবহনে সংস্কার আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল সবার পছন্দ থাকবে না। কারণ এটি নির্দিষ্ট লাইনে চলবে। সবার গন্তব্য এক রকম থাকবে না। সেদিক থেকে বলব যে, উন্নয়নটা সমন্বিত হয়নি। আমরা পেশাদারিত্বে যথেষ্ট পিছিয়ে আছি।’
সড়ক পরিবহন খাত নিয়ে সরকারের যে কৌশলগত পরিকল্পনা রয়েছে তাতে এমন আরও ৫ টি এমআরটি লাইন নির্মাণ করা হবে। আর সরকারের লক্ষ্য রয়েছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবগুলো কাজ শেষ হলে লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১২৯ কিলোমিটার আর স্টেশন হবে ১০৪ টি। এ ছাড়া যানজট কমাতে ঢাকার চারপাশে রিং রোড, বারিধারা থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত নৌপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা পাল্টে যাবে। ঢাকা সত্যিকার অর্থে স্মার্ট সিটিতে পরিণত হবে।
সারাবাংলা/জেআর/একে