Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোডম্যাপ ঠিক করতে বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫৯

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামী বছর জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণী বৈঠকে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। করোনা মহামারি ধাক্কা সামলিয়ে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সীমিত পরিসরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সমসাময়িক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার কৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে দলটি।

বিজ্ঞাপন

আগস্ট জুড়ে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে সংগঠনকে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ উঠে আসে নেতাদের বক্তব্যে। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তাই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড সম্মেলনও শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এ লক্ষ্যে আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার গাইডলাইন নিয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সেপ্টেম্বর থেকে সাংগঠনিক কর্মসূচি জোরদার শুরু করবে দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

বিজ্ঞাপন

নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, দলের আগামী জাতীয় সম্মেলন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা আমাদের শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। আমাদের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নিয়ে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেবেন। বৈঠকে আমাদের দলের সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন মতামত উপস্থাপন করবেন এবং সে আলোকেই পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা সাংগঠনিক রোডম্যাপ বাস্তবায়নে মাঠে কাজ শুরু করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুইজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত এটা তো আমাদের আগেই নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য বিভাগীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কমিটিগুলো কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের বারবার আটকে যেতে হয়। করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সময় বিভিন্ন জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো অনুমোদন করেছি। মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে বিরত থাকলেও ঘরোয়াভাবে সাংগঠনিক কর্মগুলো সচল রেখেছি।’

দলীয় সূত্র আরও জানায়, প্রায় ১ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। এরইমধ্যে দলের কয়েকজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইন্তেকাল করেছেন। তাদের শূন্যপদে অন্যদের মনোনীত করতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি চলতি বছরেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক দুইজন নেতা বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমাদের সংগঠনের যে সমস্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা ছিল সেগুলো ঠিকঠাকভাবে আমরা করতে পারিনি। এ সময় আমরা মূলত করোনাকালীন সময়ে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ কীভাবে লাঘব করা যায়? কিভাবে মানুষের পাশে থেকে খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীসহ অন্যান্য সহায়তার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে চলমান রেখেছি। এখন যেহেতু করোনায় মৃত্যুাহার কমতে শুরু করছে, সংক্রমণ হারও কমে যাচ্ছে এবং এটি যদি আরও কমে যায় তাহলে আমাদের যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে, জেলা উপজেলায় সেগুলি করার জন্য নেত্রীর দিকনির্দেশনা অনুসারে আমরা তার বাস্তবায়ন শুরু হবে।’

‘আমরা আশা করছি যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে। সেখানে আমাদের দলের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম করা উচিত, আমাদের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে গাইডলাইন দেবেন। কারণ নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করবে, জেলা পরিষদের নির্বাচন করবে; এই বিষয়গুলো নিয়ে নেত্রী দিক-নির্দেশনা দেবেন। তার আলোকে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম এবং স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো হবে সেগুলি নিয়ে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া আগামী বছর নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তার উপর আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক প্রস্তুতি থাকবে। কীভাবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে এবং সেখানে আমাদের সংগঠনের কোন ধরনের ভূমিকা থাকবে? এই বিষয়গুলোও নিয়ে নির্দেশনা আসতে পারে। আমরা আশা করছি, ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে আমাদের নেত্রী সাংগঠনিক রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন গাইডলাইন দেবেন।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া’র কাছে বৈঠকের বিষয় জানতে চাইলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হবে। আমাদের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুর্নিদিষ্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস্তবতার আলোকে সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তার বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে মিটিং হবে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ করে মিটিংয়ের তারিখ আমরা জানিয়ে দেব।’

প্রসঙ্গত গত বছর ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠক সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক বছর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আট বিভাগে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৩টি এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৫টি, চট্টগ্রামের সাতটি, ময়মনসিংহের পাঁচটি, রাজশাহীর চারটি, বরিশালের চারটি, রংপুরের তিনটি, খুলনার চারটি এবং সিলেট বিভাগের একটি সংগঠনিক জেলা। অন্যদিকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সংখ্যা প্রায় ৬৫০ মতো। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬০টি, চট্টগ্রামে ১২৯টি, রাজশাহীতে ৮৩টি, খুলনায় ৭৪টি, রংপুরে ৬৬টি, বরিশালে ৫৩টি, সিলেটে ৪৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯টির মতো কমিটি রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে ১৩৮টির মতো উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরও বেশ কিছু উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাড়ে ৬৫০ কমিটির মধ্যে এখনো ৩৫০ অধিক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া সম্মেলন হওয়া কমিটির অর্ধেকের বেশির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলন সামনে রেখে তৃণমূল ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। জেলা-উপজেলায় হাঁকডাক দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন শুরু হলেও নানা জটিলতায় বেশি দূর এগোয়নি। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে মাত্র ২৯টি জেলা সম্মেলন করতে সক্ষম হন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জাতীয় সম্মেলনের পর ২০২০ সালে জানুয়ারিতে পুনরায় জেলা-উপজেলা সম্মেলনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। কিন্তু রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সম্মেলন করতে সক্ষম হয়।

এরপর গত বছর মার্চে করোনা মহামারী শুরু হলে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে নেতা-কর্মীদের পুনরায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গতির কারণে মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে থাকার কার্যক্রম চলমান রাখে ক্ষমতাসীন দলটি।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারণ রোডম্যাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর