বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে?
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৪৪
ঢাকা: সন্তানের জন্ম বাবা-মায়ের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় করে। সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনায় মা-বাবা তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন। তবে কখনো কখনো বাবা-মায়ের মধ্যে মতের অমিলের কারণে বিচ্ছেদও ঘটে। তখন সন্তান কার কাছে থাকবে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
এ অবস্থায় সন্তান কার কাছে থাকবে? আইনে কী বলা হয়েছে? আর সন্তানের ভরণপোষণই বা কে বহন করবে? এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক এবং আইনজীবী মো. আব্দুল্লাহ আল শাইখ।
সারাবাংলার সাপ্তাহিক আইনি পরামর্শ বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘লিগ্যাল চেম্বারসে‘ বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে? ‘শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) রাতে সারাবাংলার ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আর সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইনজীবী ইফফাত গিয়াস আরেফিন।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/846756719548115
নিম্নে আলোচনা অনুষ্ঠানটির পরিমার্জিত লিখিত আকারে তুলে ধরা হলো:
‘বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে? কে বহন করবে সন্তানের ভরণপোষণ? আমাদের দেশের আইন এ বিষয়ে যা বলেছে? এ বিষয়ে আইনজীবী আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক বলেন, আমাদের ‘অভিভাবক ও প্রতিপালন আইন-১৮৯০ এবং পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫’ রয়েছে। বিচ্ছেদের পর অভিভাবকত্ব কে পাবেন? বাবা-মা না অন্য কেউ। এখানে দুটো বিষয় লক্ষণীয়।
১. অভিভাবকত্ব।
২. কাস্টডি।
অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে পিতাই হলো সন্তানের ন্যাচারাল অভিভাবক। আর কাস্টডিয়ানের ক্ষেত্রে- ছেলে সন্তানের বেলায় সন্তানের বয়স ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তানের বেলায় সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি আরও বলেন, ফ্যামিলি কোর্ড অর্ডিন্যান্স (FCU) অনুযায়ী অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে কাস্টডিয়ান হিসেবে মা প্রথম অগ্রাধিকার পাবেন।
আমাদের দেশে আগে বিচ্ছেদ হতো মৌখিকভাবে। বর্তমানে মেট্টোপলিটন এলাকায় সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে আর এর বাইরে হলে ইউনিয়ন বা পৌরসভার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে।
বিচ্ছেদ হওয়ার প্রক্রিয়াটি হলো: প্রথমে অপরজনকে নোটিশ করতে হবে। দুপক্ষকে একত্রে বসতে হবে। তিন মাস পর এক তালাক বলে বিবেচিত হবে। পরবর্তীতে তারা চাইলে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। বিচ্ছেদের পর সন্তানের কল্যাণের বিষয়ে শারীরিক, মানসিক ও শিক্ষার বিষয়ে মা ভূমিকা রাখতে না পারলে, সেখানে আদালত ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, এখানে পারিবারিক মুসলিম আইনও বাদ দেওয়া যাবে না। সন্তানের বয়স ৭ বছরের অধিক হলে সন্তানের মতামত নিয়ে আদালতও সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এখানে আমাদের জেনারেল ল’ এর একটা একসেপশন রয়েছে, যেখানে সন্তানের ম্যাচুরিটি হয়নি। তাদের কল্যাণ কার কাছে হবে। এ বিষয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তারা তো বলতে পারবে না। তারপরও আমরা দেখেছি সন্তানরা যদি তাদের মানসিক, শারীরিক ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলো মায়ের কাছে পায় তাহলে মায়ের কাছে থাকতে পারে; চাইলে বাবার কাছেও যেতে পারে। এ ছাড়া সন্তানের কল্যাণ নিশ্চিতের জন্য আদালতও সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
মা-বাবার বিচ্ছেদের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকলে এমতাবস্থায় পিতার কাছ থেকে সন্তানের ভরণপোষণের খরচ মা পাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী মো. আব্দুল্লাহ আল শাইখ বলেন, সন্তান মা নিজের কাছে রাখতে পারে। তবে মা যদি চান পিতা সন্তানের ভরণপোষণ করুক। এ জন্য মা যদি আদালতের দ্বারস্থ হন, তখন আদালত পিতার প্রতি সন্তানের ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারেন। সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও ভরণপোষণ পাবেন। কারণ হচ্ছে- সন্তানের অভিভাবক হচ্ছেন তার পিতা।
তিনি আরও বলেন, সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও বাবা অভিভাবক থেকে যান। তখন লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ বাবার উপার্জন অনুযায়ী আদালত নির্ধারণ করে দিতে পারেন। অথবা বাবা-মা একত্রে বসে সমঝোতা করে নিতে পারেন। আইনগতভাবে মা এই সুযোগটি পেতে পারেন।
সন্তানের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আইনের দ্বারস্থ একেবারে সবার শেষ উপায় হওয়া উচিত। বাচ্চাদের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আদালতে না এসে বাবা-মা নিজেরা বসে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাহলে সন্তানের শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাটা ভালোভাবে হবে বলে মনে করেন আইনজীবী মো. আব্দুল্লাহ আল শাইখ।
যখন বিচ্ছেদ হয়, তখন সন্তানের কল্যাণের চেয়ে বাবা-মায়ের জেদি মনোভাব বেশি কাজ করে। পারিবারিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে এটা এড়িয়ে চলা উচিত। সন্তানের কল্যাণ নিশ্চিতের জন্য পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে যেভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। আর এসব বিষয়ে আমাদের পরামর্শ হলো- যখন কোন কিছুই কাজ করবে না বা কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান করা যাবে না, তখন আইন আদালতের আশ্রয় নেওয়া উচিত বলে মনে করেন আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম