Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ই অরেঞ্জের টাকা মেরে ইউরোপ পালাতে চেয়েছিল পুলিশ পরিদর্শক সোহেল

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৫৪

ঢাকা: প্রতারণা করে গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর গ্রেফতার এড়াতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা। তিনি মূলত ভারত বা নেপাল হয়ে ইউরোপ অথবা আমেরিকায় পালিয়ে যেতেন বলে জানা গেছে। তবে তার আগেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক হন তিনি।

নগদ টাকা পরিশোধের পরেও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ার অভিযোগে গত ১৭ আগস্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন তাহেরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক। মামলায় প্রতারণামূলকভাবে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের কথাও উল্লেখ করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর অভিযোগ ওঠে, ই-অরেঞ্জের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়ার ভাই বনানী থানার তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা ওই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।

বিজ্ঞাপন

এরপর গুলশান থানার মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে সিআইডি টাকা পাচারের বিষয়টি জানতে পারে। আর সেই পাচারের সঙ্গে জড়িত এবং মূলহোতা হিসেবে নাম উঠে আসে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার। তখন সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি পুলিশ সদর দফতরে চিঠি লেখে। তবে সেই চিঠির কোনো সমাধান না হতেই সোহেল রানা কাউকে না জানিয়েই ভারতে পালিয়ে যায়।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, সোহেল রানার নেতৃত্বেই পুরো কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যক্রম চলতো। তিনি অভয় দিয়ে বলতেন, কোম্পানির কারও কোনো সমস্যা হবে না। প্রায় প্রতিটি মিটিংসহ সবকিছুতেই সোহেল রানা উপস্থিত থাকতেন। প্রতিদিন গ্রাকদের জমা করা টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হতো। সেই টাকার কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ই-অরেঞ্জের ‘পৃষ্ঠপোষক’ পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা ভারতে গ্রেফতার

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বনানী থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘সোহেল রানা কি ছুটি নিয়েছেন, না কি এমনিতেই থানায় অনুপস্থিত ছিলেন?’- এর জবাবে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তথ্যটি আমি জানাতে পারব না।’ এ ব্যাপারে ওসিকে কল দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কিছুক্ষণ পর বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজমকে সরকারি মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বনানী থানার আরেকজন এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা বেশকিছু দিন ধরে থানায় তিনি নিয়মিত আসতেন না। সবশেষ গত সপ্তাহে একদিন এসেছিলেন। এরপর আর আসেননি। থানা থেকেও ফোন করে তাকে পায়নি ওসি। একজন এএসআইকে বাসায় পাঠিয়েও কোনো হদিস মেলেনি। সবশেষ জানা গেল, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিএসএফ সোহেল রানাকে আটক করে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে থানায় সোহেল রানার অনুপস্থিতির বিষয়টা ডিএমপির ঊর্ধ্বতনদের বলা হয়েছে।’

ওই এসআই আরও বলেন, ‘একেতো গোপালগঞ্জে বাড়ি, অন্যদিকে বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক। তার ওপর রাজনৈতিক এক নেতার সাহচার্যে থেকে অধিক ক্ষমতার অধিকারী হন। সেই ত্রি-মাত্রিক ক্ষমতাবলেই সোহেল রানা ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে প্রতারণা করেন।’

এদিতে ভারতীয় গণমাধ্যম প্রকাশিত সংবাদে জানায়, সোহেল রানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তার কাছ থেকে অনেকগুলো ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড এবং ভিসাসহ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। গ্রেফতার এড়াতেই তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতেও তিনি থাকতেন না। ভারত থেকে আমেরিকা, কানাডা বা ইউরোপে ঢোকার পরিকল্পনা ছিল। তার বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে, ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে লিখিত বার্তা পাওয়ার পর সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে।

অন্যদিকে, পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো কিছু জানা যায়নি। ভারতের পুলিশ এরই মধ্যে সোহেল রানার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

ই-অরেঞ্জ পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর