৭০৯ কোটি টাকায় ১৩ জেলায় বসছে প্রি-পেমেন্ট বিদ্যুৎ মিটার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫৩
ঢাকা: স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট বিদ্যুৎ মিটার বসছে দেশের ১৩ জেলায়। ফলে নন-টেকনিক্যাল সিস্টেম লস এক শতাংশ কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া অগ্রিম ১০০ শতাংশ রাজস্ব আদায়, গ্রহকদের দ্রুত এবং ঝামেলা মুক্ত সেবা দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ‘স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ইন ডিস্ট্রিবিউশন জোনস অব বিপিডিবি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে ৩৩৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৮৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। যেসব স্থানে এটি বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং নোয়াখালী জেলা।
এছাড়া ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলা এবং সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় প্রায় ৩৩ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান মিটারিং সিস্টেমে নন-টেশনিক্যাল সিস্টেম লস তুলনামূলকভাবে বেশি এবং বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ ও বকেয়া বিল আদায় করা কষ্টসাধ্য। এছাড়া অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহার এবং মিটার টেম্পারিং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিগুলি বিবেচনায় নিয়ে এরমধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) প্রায় ১২ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় আনা হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় বাবিউবোর আওতায় চারটি বিতরণ জোন-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেটে মোট ১০ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ঋণের সময়সীমা চলতি বছরের জুন হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর বাড়ানো হয়েছে। ইআরডি থেকে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এই ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ইন ডিস্ট্রিবিউশন জোনস অফ বিপিডিবি এই প্রকল্পটির প্রস্তাব চলতি বছরের ২ আগস্ট বিদ্যুৎ বিভাগ হতে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৯ লাখ ৭০ হাজার সিঙ্গেল ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট ক্রয় ও স্থাপন, ৩০ হাজার থ্রি ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ক্রয় ও স্থাপন, ৮ হাজার ৮৩১টি ডাটা কনসেন্ট্রেটর ইফনিট ক্রয় ও স্থাপন এবং ২৫টি হ্যান্ড হেল্ড ইফনিট স্থাপন করা হবে।
ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যপত্রে বলা হয়- প্রকল্পটির অর্থায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু ডিপিপিতে প্রকল্পটির অর্থায়নে এডিবির কোন দাফতরিক (অফিসিয়ালি) সম্মতিপত্র যুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মতামত জানা প্রয়োজন। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের মাধ্যমে চলতি বছরে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ করা হয়েছে। এই সমীক্ষা এবং প্রকল্পের প্রস্তাবিত কার্যপরিধি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এডিবির সম্মতি আছে কিনা আলোচনা করা প্রয়োজন। প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার পর চলমান প্রেক্ষাপটে এডিবি পুনরায় সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা প্রয়োজন হলে প্রকল্পের কার্যপরিধি পরিবর্তন হতে পারে।
প্রকল্পটির আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পর্যালোচনাগুলো হচ্ছে- প্রস্তাবিত প্রকল্পের আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ধারণায় প্রকল্পের আওতায় যেসব স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ক্রয় করা হবে সেগুলোর লাইফ টাইম ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারের লাইফ টাইম ২০ বছর ধরা হয়েছে।
এদিকে, স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারণে জেলাভিত্তিক পরিমাণ এবং ব্যয় পার্থক্য দেখা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি আদর্শ স্মার্ট মিটার সিস্টেম ডিজাইন নির্দেশিকা প্রস্তুত এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে বলেও জানিয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও