ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার আহ্বান
৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৩৫
ইউরোপ সফরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বৈঠকে তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্রিটেনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার লাল তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেওয়াসহ দুই দেশের পারস্পারিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দু’জন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বৈঠকে যোগ দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিস্তৃত পরিসরে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে, সুনির্দিষ্টভাবে বললে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে বাংলাদেশে আটকা পড়া ৭ হাজারেরও বেশি ব্রিটিশ-বাংলাদেশির দুর্ভোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশকে কোভিড লাল-তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত যুক্তরাজ্যের।
বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে ডমিনিক রাব বলেন, ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে কোভিড সংক্রমণের হার কমে আসার বিষয়টি অবগত। ফলে কোভিড লাল-তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাজ্য পর্যালোচনা করবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই— আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশের ঘন ঘন জিনোমিক সিকোয়েন্সিং ডেটা আপলোডের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার লাল-তালিকায় বাংলাদেশের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত পর্যালোচনা করেন বলেও জানান তিনি।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক ও মূল্যবান সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় এবং ব্রেক্সিট পরবর্তী কৌশলগত অংশীদারিত্বভিত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সম্প্রসারণশীল বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি তারা যৌথভাবে উদযাপন করতে একমত হন।
নিরাপদ ও টেকসই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান রোহিঙ্গা সংকট ও অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা করে ড. মোমেন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগতে ব্রিটিশ মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।
মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে রাব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, আসিয়ান ও জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে।
উভয় মন্ত্রী বর্তমান আফগান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হন। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিদ্ধ। আমরা আফগানিস্তানের জনগণের পাশে দাঁড়াব। এছাড়া, আফগানিস্তানের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য তাদের নাগরিকদের কথাও শোনা উচিত।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে মোমেন বিশেষ করে মহামারী পরবর্তী অর্ডার বাতিল এবং যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতাদের অর্থ পরিশোধ না করার কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ক্ষতির ফলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের শূন্য শুল্কের জিএসপি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান করেন। সৌদি আরব, জাপান, ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বাংলাদেশে এরই মধ্যে নিবেদিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সুবিধা গ্রহণকারী দেশগুলোর উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেন। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক এবং পোশাক শিল্পের পাশাপাশি অফশোর সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক গণপরিবহন ও রেল খাতে নতুন বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
ড. মোমেন ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিম্ন কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য উন্নত দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য থেকে উপযুক্ত প্রযুক্তি, বৃহৎ বিনিয়োগ ও অর্থায়ন অবিলম্বে হস্তান্তরের আহ্বান জানান। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর
এ কে আবদুল মোমেন ডমিনিক রা’ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী