সরকারে নারীর প্রতিনিধিত্ব নেই— কাবুলে বিক্ষোভ
৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৩:০৩
আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে নারীর প্রতিনিধিত্ব না থাকায় রাজধানী কাবুল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশে বিক্ষোভ করেছেন নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।
এদিকে, নারী বিবর্জিত মন্ত্রিসভা মেনে নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ আফগান নারীরা।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে নারীদের একটি দল তালেবানের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত ছবি থেকে দেখা যায় ‘নারীর অস্তিত্ব অস্বীকার করে কোন সরকার হতে পারে না’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে পদযাত্রা করছেন তারা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর হাতে থাকা কয়েকটি ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘আফগান নারীরা দীর্ঘজীবী হোন’ এমন স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা। কারও কারও হাতে ছিল দুই দিন আগেই তালেবানের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সেই গর্ভবতী নারী পুলিশ কর্মকর্তা বানু নিগারের ছবি।
যদিও, তালেবান ওই নারীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, নারীদের পূর্ণ অধিকারের দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই আফগানিস্তানে নারী বিক্ষোভ চলে আসছে। তার মধ্যে তালেবান নতুন সরকারের মন্ত্রীদের নাম ঘোষণার পর বুধবার নতুন করে এই নারী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিবিসি জানায়, সমাবেত হওয়া নারীদেরকে মারধর করে তালেবান বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া কিছু সাংবাদিককেও তারা মারধর করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম।
এর আগে, মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধান করে মঙ্গলবার নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সরকারের উপপ্রধান থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, আইন, যোগাযোগসহ সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-উপমন্ত্রীপদে পুরুষদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারে তালেবান ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা থাকলেও কোন নারীর স্থান হয়নি। এমকি নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও রাখা হয়নি।
তারও আগে, তালেবান নেতারা আফগানিস্তান দখল করে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, আফগান সমাজে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু কার্যত সরকার গঠনের আলোচনায় নারীদের রাখা হয়নি। বরং সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে তালেবান এই সংকেতই দিয়েছে যে, নারীদের ঘরে থাকা উচিত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তালেবান নারীদেরকে কাজও ছাড়তে বলেছে।
অপরদিকে, তালেবানের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা নারীদের বিক্ষোভ কাঁদানে গ্যাস, পিপার স্প্রে এবং গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে তালেবানের ভাষ্য, এই ধরনের বিক্ষোভ অবৈধ। বিক্ষোভকারীদেরকে পদযাত্রা করার অনুমতি নিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে রূঢ় কোন ভাষাও ব্যবহার যাবে না।
বুধবারের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে চাবুকপেটা এবং বেত্রাঘাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী।
বিবিসিকে তিনি বলেন, তারা ঘরে ফিরে গিয়ে ইসলামিক আমিরাতকে মেনে নিতে বলেছে। কিন্তু যে সরকারে নারীদের স্থান দেওয়া হয়নি; কোন অধিকার দেওয়া হয়নি, সেখানে নারীরা কেন আমিরাতকে মেনে নেবে?
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরেক নারী বলেন, তালেবান প্রমাণ করে দিয়েছে তারা বদলায়নি; বদলাতে পারে না। নারী অধিকারের সেই রক্ষকরা আজ কোথায়?
ওই নারী আরও জানান, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেসব তরুণ নারী বিক্ষোভ দেখেছে; তাদেরকেও তালেবান পিটিয়েছে। কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে স্কুলের পথে যাওয়া ১৬ বছরের এক কিশোরকে মারধর করেছে তালেবান।
এছাড়াও, স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকও মারধরে আহত তাদের দুই সাংবাদিককের ছবি দিয়েছেন টুইটারে। তালেবান তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/একেএম