Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধুলায় ধূসর ক্লাসরুমে প্রাণ ফেরার অপেক্ষা

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:৫২

ঢাকা: দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির অভাবে ধুলায় ধূসর হয়ে আছে ক্লাসরুম। কাঠের বেঞ্চগুলো খেয়েছে পোকায়, জং ধরেছে লোহায়। কোথাও আবার শ্রেণিকক্ষের তালা খোলার চাবিই খুঁজে পাচ্ছেন না নিরাপত্তাকর্মীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের সংযোগ স্বাভাবিক নেই। অনেক ক্লাসরুমে বেঞ্চ, জানালা, দরজা, এমনকি শিক্ষক দাঁড়ানোর ডায়াসও ভাঙা দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি ক্লাসরুমেই ছিল উপচে পড়া ধুলা। রুমের ভেতরে দেয়াল বেয়ে উঠেছে আগাছা। স্কুল খোলার ঘোষণা আসার পর থেকে যে কয়টি বিদ্যালয়ে ঘুরেছেন সারাবাংলার এই প্রতিবেদক, তার সবগুলোতেই চোখে পড়েছে এই দৃশ্য। তবুও এসব বেহাল ক্লাসরুমে এখন শিক্ষার্থী ফেরার অপেক্ষা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা এসব বিদ্যালয় খুলতে আর মাত্র দু’দিনের অপেক্ষা। তাই যত্নের অভাবে জীর্ণ হয়ে যাওয়া ক্লাসরুমগুলো এখন সাজিয়ে তোলা হচ্ছে আগের মতো করে।

রাজধানীর লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এর মধ্যেও আমরা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছি। তবে ক্লাসরুম নিয়মিত খোলা হয়নি। এ কারণে ঘরগুলোতে গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা এসব ক্লাসরুমকে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী করে তুলছি।’

তিনি বলেন, ‘এতদিন বন্ধ থাকবে এটা আমরা শুরুতে ভাবিইনি। আবার ক্লাসরুম না খুললে যে এমন বাজে পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সেটাও ভাবিনি। এখন বেশি পরিশ্রম হচ্ছে। ১২ তারিখের আগেই আমরা সব প্রস্তুত করে ফেলব।’

বিজ্ঞাপন

কেবল এই বিদ্যালয়ই নয়, ভিকারুননিসা, অগ্রণী, আজিমপুর গার্লস, ঢাকা কলেজ, নবকুমার ইনস্টিটিউট, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও কমবেশি একই রকম। দীর্ঘদিন ক্লাস না হওয়ায় অযত্নে-অবহেলায় অনেক ক্লাসরুমে ঢোকাও দায়। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় জন্মেছে কোমর সমান ঘাস।

ভিকারুনিসার অধ্যক্ষ কামরুন নাহার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি বিদ্যালয়ের পরিবেশ যতটা সম্ভব সুন্দর রাখার। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পদচারণা না থাকায় অনেক ক্লাসের পরিবেশ গুমোট হয়ে গেছে। আমরা ক্লাসগুলো পরিষ্কার করেছি। এখানে ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধাই হবে না।’

তবে এসব ক্লাসরুমের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। তাদের মতে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্লাসরুমগুলোতে সংক্রামক ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব থাকতে পারে। এতে করে করোনা না হলেও শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে অন্য কোনো রোগে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ডা. মরিয়ম মৌ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ডাস্ট এলার্জি আছে তারা শুরুতেই ঝামেলায় পড়বে। এছাড়াও শিশুদের মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এই শঙ্কা কমিয়ে আনতে আরেকটু সময় ও যত্ন নিয়ে ক্লাসরুমগুলো সংস্কার করতে হবে।’

এ ব্যাপারে মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই বিদ্যালয় সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছি। ক্লাস হবে সবধরনের স্বাস্থবিধি মেনে। আশা করি শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় আমাদের শিক্ষকরা সবসময় সচেতন থাকবেন।’

তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় হাত ধোয়া ও তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখা হবে। ১২ সেপ্টেম্বরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে পঞ্চম, দশম, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে।

এদিকে স্কুল-কলেজ খোলার পর শুরুতে দিনে দুটি করে ক্লাস রেখে রুটিন তৈরি করতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সই করা এক চিঠিতে ক্লাস রুটিন প্রণয়নের জন্য মোট ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। আর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রুটিন তৈরি করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। রুটিনের সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাস নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকস্তর সংযুক্ত রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ওইসব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন তৈরি করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মতো কোনো বিষয় যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে রুটিন তৈরি করতে নির্দেশনায় জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি বা সমাবেশ বন্ধ থাকবে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কমে আসায় সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

১২ সেপ্টেম্বর ক্লাসরুম বেহাল শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর