আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবানবিরোধী সংবাদ সংগ্রহের কারণে অন্তত দু’জন আফগান সাংবাদিককে আটক ও মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইতিলাত রোজ পত্রিকায় কর্মরত ওই দুই সাংবাদিককে একটি থানায় নিয়ে আটকে রেখে তালেবানরা পিটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। নেমাতুল্লাহ নাকদি ও তাকি দারিয়াবি নামের ওই দুই সাংবাদিককে পেটানোর বিষয়ে অবশ্য তালেবান কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি।
এএফপির খবরে বলা হয়, শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও কাজ করতে দেওয়ার দাবিতে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) কাবুলের একটি থানার সামনে বিক্ষোভ করছিলেন নারীরা। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন নেমাতুল্লাহ নাকদি ও তাকি দারিয়াবি। এসময় বিক্ষোভ আয়োজনের অভিযোগ তুলে তাদের দু’জনকে ওই পুলিশ স্টেশনেই দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, থানাতেই দুই সাংবাদিককে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের ঘুষি ও লাথি মারার পাশাপাশি ব্যাটন ও বৈদ্যুতিক তার দিয়েও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে।
আলোকচিত্রী নেমাতুল্লাহ নাকদি জানান, ছবি তুলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তালেবান যোদ্ধারা ‘ছবি তোলা যাবে না’ বলে তাদের নিষেধ করতে থাকেন। পরে ছবি তুলেছে এমন সবাইকে আটক করে তাদের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। নেমাতুল্লাহ’র ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তালেবান সদস্যরা। এসময় নেমাতুল্লাহ ক্যামেরাটি অন্য একজনকে পৌঁছে দিতে পারলে তিন জন তালেবান তাকে ধরে ফেলেন এবং পরে থানায় নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করেন।
নেমাতুল্লাহ বলেন, ‘ওরা (তালেবান) আমাদের শত্রু হিসেবে দেখে। এক তালেবান সদস্য পা দিয়ে মেঝের সঙ্গে আমার মাথা চেপে ধরে রাখে এবং মাথায় লাথি মারতে থাকে। মনে হচ্ছিল, ওরা আমাকে মেরেই ফেলবে।’
নেমাতুল্লাহ বলছেন, কেন মারধর করা হচ্ছে— এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তালেবানদের কাছ থেকে জবাব পেয়েছেন, ‘তোমরা ভাগ্যবান যে তোমাদের জবাই করা হয়নি।’
এর আগে, আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর নারী অধিকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান। কিন্তু সরকার ঘোষণার আগে-পরে এই সংগঠনটি নারীদের পোশাক নির্দিষ্ট করে দেওয়াসহ পড়ালেখা, কাজ করা ও খেলাধুলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একইসঙ্গে সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে তালেবানের হাতে কয়েক ডজন সাংবাদিক মারধর, আটক ও কাজে বাধার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনা ২০ বছর আগের তালেবান শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
নেমাতুল্লাহ ও তাকি যে পত্রিকাতে কর্মরত, সেই ইতিলাত রোজ পত্রিকার সম্পাদক জাকি দারিয়াবি বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানে বসে দেখতে পাচ্ছি— সরকার গঠনের আগে ও পরে তালেবানদের কথা ও কাজের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিক অধিকার সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) কাবুলে সাংবাদিক নির্যাতনের এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সিপিজে বলছে, বুধবারের বিক্ষোভ থেকে অন্তত ১৪ জন সাংবাদিককে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ছয় জনকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। অবিলম্বে সব ধরনের সাংবাদিক নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানানোর পাশাপাশি আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সিপিজে’র এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর স্টিভেন বাটলার বলেন, তালেবানরা খুব দ্রুতই আফগানিস্তানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসছে। তালেবানদের কাছে আমার দাবি থাকবে— খুব দ্রুতই আটক সাংবাদিকদের ছেড়ে দেওয়া হোক এবং তাদের ওপর সব ধরনের শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা হোক যেন তারা মুক্তভাবে ও নির্ভয়ে কাজ করতে পারে।