বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের যে নির্দেশনা দিলেন শেখ হাসিনা
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:২৪
ঢাকা: দীর্ঘ প্রায় এক বছর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই সভা থেকে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও দলকে গতিশীল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এই সভার বড় অংশজুড়েই ছিল দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার বিষয়টি। আর এ ক্ষেত্রে দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সক্রিয় থেকে অন্তর্কোন্দল বা দ্বন্দ্ব নিরসনের নির্দেশনা শেখ হাসিনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাইরেও যেসব এলাকা বা জেলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা রয়েছেন, তাদেরও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে বলেছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে অবস্থান করায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ তার বিভাগের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক বিভিন্ন কোন্দলের তথ্যও উঠে আসে। এ ক্ষেত্রে কোথায় কোন কোন নেতাদের মধ্যে বিরোধ-দ্বন্দ্ব রয়েছে কিংবা কোথায় এমপিরা ‘মাইম্যান’দের সংগঠনের নেতা বানাতে প্রভাব বিস্তার করছে, কোথায় কোন কোন নেতাদের নেতৃত্বে গ্রুপিং আছে— এসব তথ্যও সুনির্দিষ্টভাবে স্থান পেয়েছে এসব রিপোর্টে। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা কোন্দলে কারা কোথায় নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে, আকারে-ইঙ্গিতে সেসব তথ্যও বিভাগীয় রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত সূত্র বলছে, সাংগঠনিক নেতাদের রিপোর্ট ও বক্তব্যের জের ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কিছু কিছু জেলা-উপজেলার কিছু সমস্যা সমাধানের পথ তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাতলে দেন। এ ক্ষেত্রে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তিনি সক্রিয় হয়ে উঠতে বলেন।
আরও পড়ুন-
- ‘দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী কাউকে ছাড় নয়’
- আগামী নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়নের নির্দেশ শেখ হাসিনার
- ‘যারা আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ভেঙেছে, তাদের তালিকা হাতে আছে’
- গুজব-মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
- ‘সারাদেশে আ.লীগ শক্তিশালী থাকায় করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে’
- দল শক্তিশালী করতে এমপিদের সাংগঠনিক দায়িত্বে লাগাম টানার ইঙ্গিত
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের যারা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আছেন, আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে ওই এলাকায় আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা যারা আছেন, এলাকা বা জেলার সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন, সমন্বয় করবেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বাইরেও যারা কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, তাদের সঙ্গেও সংগঠনের স্বার্থে পরামর্শ করে সমন্বয় করতে হবে। নিজ এলাকায় তাদের বাদ দিয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী হবে না। এ বিষয়গুলো আমাদের সমন্বয় রাখতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে।
বৈঠক সূত্র বলছে, এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাদারীপুরে আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান আছেন। তিনি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা। সেই হিসাবে তিনি ওই এলাকার মুরব্বি। ফলে মাদারীপুর নিয়ে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তার (শাজাহান খান) সঙ্গে পরামর্শ করেই নিতে হবে। দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে, নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রাখলে হবে না। মোট কথা, সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে।
সারাদেশে বেশকিছু জেলা, উপজেলা ও পৌরসভাতেই দলের কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধাক্কা সামলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামী বছরের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি।
বৈঠক শেষে গণভবনের গেটের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের আট বিভাগের আট জন সাংগঠনিক সম্পাদকের কথা নেত্রী (শেখ হাসিনা) শুনেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে থাকায় আমাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বক্তব্য রেখেছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকেরা লিখিত রিপোর্ট করেছেন নেত্রীর কাছে। তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা ধরে তারা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছেন। যেখানে যেখানে বিবাদ আছে, যেখানে সমাধান করা দরকার, নেত্রী সেসব কলহ-বিবাদ দ্রুত মীমাংসা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে সমসাময়িক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্য বিভিন্ন নির্দেশনাও দেন দলীয় সভাপতি। ওবায়দুল কাদের জানান, এ প্রসঙ্গে দ্রুতই নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শুরু করতে বলেছেন শেখ হাসিনা। আর এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপকমিটিকে অনলাইন সেমিনারের মাধ্যমে ইশতেহারে যুক্ত করার মতো বিষয়গুলো তুলে আনার পরামর্শও দিয়েছেন।
এর আগে, সকাল ১১টায় গণভবনে শুরু হয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠক, শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৩টায়। গত বছরের ৩ অক্টোবরের পর এই প্রথম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলো।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সভা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাংগঠনিক সম্পাদক