জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেবে আরও ৫ কেন্দ্র, উদ্বোধন রোববার
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২৮
ঢাকা: বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আরও ৮৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এ বিদ্যুৎ আসবে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-৩ কম্পাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, সিলেট পাওয়ার প্লান্ট থেকে পাওয়া যাবে ৮৯ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-২ থেকে পাওয়া যাবে ১০০ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে ১০৪ মেগাওয়াট, বাগেরহাটের মধুমতি কেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
এই পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে রোববার। এদিন সকাল দশটায় সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোট পাঁচটা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে। আগেই এগুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।’
এক নজরে বিদ্যুৎ খাত: বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। গত ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন করেছে ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৪০০০ মেগাওয়াট ধরা হলেও এরই মধ্যে তা অর্জন করেছে সরকার। বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৯ লাখ। মোট সঞ্চালন লাইন (সা. কি. মি)। গ্রিড সাব স্টেশন ক্ষমতা ( এমভিএ) ১২ হাজার ৬৭৯, বিতরন লাইন ( কি. মি) ৬ লাখ ১৪ হাজার। বিতরণ লস ৮.৪৮ শতাংশ (জুন ২০২১)। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন (কি.ও:আ) ৫৬০, বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৫টি। সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ৬০ লাখ।
চলমান প্রকল্প: এরপরেও নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ২৪ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প চলমান। এরমধ্যে ৪ হাজার ২৮৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন সরকারের ৯টি প্রকল্প, এই নয়টির একটি হবে নবায়নযোগ্য। আর ৩ হাজার ৭৩১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সরকারি-বেসরকারি যৌথভাবে তিনটি প্রকল্প। ৫ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বেসরকারি উদ্যোগে, এরমধ্যে আটটি রয়েছে নবায়নযোগ্য। সব মিলিয়ে চলমান ২৪টি প্রকল্প এরমধ্যে ৯টি নবায়নযোগ্য। এসকল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ১৩ হাজার ৬৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
পরিকল্পনাধীন ও বাস্তবায়নাধীন কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প: কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে রয়েছে আটটি। এগুলো হলো ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, মহেশখালীতে বিপিডিবি ও সিঙ্গাপুর জয়েন্ট ভেঞ্চার ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী বিপিডিবি ও টিএনবি মালয়েশিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চার ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী বিপিডিপি ও সিএইডিএইচকে, চায়না জয়েন্ট ভেঞ্চার ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী বিপিডিবি ও কেপকো কোরিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চার ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা, পটুয়াখালী, এনডব্লিওপিজিসিএল এবং সিএমসি, চায়না জয়েন্ট ভেঞ্চার ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র।
চুক্তি স্বাক্ষর আরও ১৫১ প্রকল্পের: বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের ওয়েবসাইটে উল্লেখিত তথ্যে দেখা গেছে। আরও ১৫১ বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণে নতুন করে চুক্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন সরকারের রয়েছে ৫২টি, যৌথভাবে ৪টি এই চারটির উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৭৫ মেগাওয়াট। ভাড়াভিত্তিক হবে ২০টি সেখানে ১ হাজার ৬৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আইপিপি ৭৫টি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশে গ্রীষ্মকালে ১২ কিংবা ১৩ হাজারের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা ওঠে না। শীতে সেটা ৫ হাজার কমে যায়। অথচ চাহিদার বিপরীতে সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজারের ওপরে। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যমান কেন্দ্রের অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের বেশিরভাগ সময় অলস পড়ে থাকে।
চাহিদার চেয়েও দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হওয়া সত্তেও নতুন উৎপাদন কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে কীনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্যাপাসিটি বেশি এটা ঠিক। এরমধ্যে অনেকগুলো বটলনেক আছে। যেমন বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ভীষণ রকম ক্রাইসিসে। সেগুলো স্বক্ষমতা অনুযায়ী পুরোপুরি উৎপাদন করতে পারে না। তেমনি কয়লার অভাবে উত্তরবঙ্গে ৩৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র ১০৫ এর বেশি উৎপাদন করতে পারে না। সে কারণে যে নতুন পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র আসবে তা ক্যাপাসিটি থাকার পরে চাহিদা মেটাতে যেটুকু হিমশিম খাচ্ছে তা আরও কমফোর্টেবল হবে। এতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।’
সারাবাংলা/জেআর/একে