Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বাদশে চোখ আওয়ামী লীগের, বিদ্রোহীরা পাবেন না নৌকা

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:০৬

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সুসংগঠিত করে নৌকার জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেটি নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ বা বিদ্রোহী হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এবং যারা সামনেও বিদ্রোহীও প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন— ভবিষ্যতে তাদেরও দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি দ্রুত সময়ে তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আরও সুসংহত করার নির্দেশ দেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা।

গত বছর ৩ অক্টোবর ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হয়েছিল। এরপর করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে প্রায় এক বছরে আর কোনো বৈঠক হয়নি এই কমিটির। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সীমিত পরিসরে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সমসাময়িক ইস্যুসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন-

দলের কয়েকজন নেতা বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) বহুদিন পর দলীয় প্রধানের সঙ্গে নেতাদের নিয়ে সম্মুখ সাক্ষাতে বৈঠক হয়েছে। এটি আমাদের কার্যনির্বাহী সংসদের সব সদস্যের জন্যই একটা আনন্দের দিন ছিল। আমাদের সাংগঠনিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কিছু জায়গায় সংগঠনের অভ্যন্তরীণ তথা কোথাও নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা দূরত্ব তৈরি হয়ে আছে; সেই বিষয়গুলো চিহ্নিত করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন নেত্রী। ভবিষ্যতে সেগুলো যেন আর না হয় এবং তা দ্রুত সময়ে নিরসনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন। চিহ্নিত দূরত্ব তথা সংকটগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাব বলয় তৈরির বিষয়ে দলীয় প্রধানের নির্দেশনার বিষয়ে নেতারা জানান, সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই যারা দলের ভেতরে উপদল বা দলের মধ্যে ঘর তৈরি কিংবা দলের যেসব সংসদ সদস্যের মধ্যে নিজেদের বলয় তৈরির প্রবণতা রয়েছে, তাদেরও এ ধরনের প্রবণতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, দল থাকলেই এমপি থাকবে, দল থাকলেই রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকব। সুতরাং দলের কাঠামো যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, ভেঙে পড়ে, তাহলে নিজস্ব ব্যক্তিগত শক্তি দিয়ে আমাদের যে অশুভ শক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে; সেটি তো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন।

যেসব সংসদ সদস্য জেলা পর্যায়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন, তাদের আগামী দিনে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ইঙ্গিত বা নির্দেশনা এসেছে কি না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেতারা জানান, এমপিদের তো কতগুলো বাড়তি সুযোগ-সুবিধা থাকে, যেগুলো সহজেই নেতাকর্মীদের প্রভাবিত করার সুযোগ তৈরি করতে পারে। সেটি যেন দলের পক্ষে থাকে, কোনো ব্যক্তিবাদ যেন গড়ে না ওঠে, সে বিষয়ে নজর দেওয়া হবে।

নেতারা বলেন, আট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পাশাপাশি তাদের বক্তব্যে বিভিন্ন সংকট-দ্বন্দ্ব-প্রভাব বিস্তার করার দিক তুলে ধরেছেন। এতে কোথায় পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি আছে, কারা কোথায় একে-অন্যের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলে, আবার কিছু কিছু জায়গায় দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে— সেই বিষয়গুলোও আলোচনায় এসেছে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব জেলা সম্মেলন করার অপেক্ষায় আছে বা যেসব জেলায় সম্মেলন জরুরি, সেসব জেলায় সম্মেলন আয়োজনের তাগিদ দেওয়া হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ তো বটেই, অনেক জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে অনেক কারণেই সংগঠনের ভেতরে স্থবিরতা বা সমন্বয়হীনতা প্রকট। সেগুলো নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর একটা তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন তো অবশ্যই একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যেই আমাদের জনগণের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় ফিরতে হবে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। সেই নির্দেশনাই দলীয় সভানেত্রী আমাদের দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সংগঠনের বিরুদ্ধে, সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যদি জাতীয় নির্বাচনে কেউ অবস্থান গ্রহণ করে বা বিদ্রোহী হয়, তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও একটা ইঙ্গিত তিনি (শেখ হাসিনা) দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে তাদের (বিদ্রোহী) আর নমিনেশন দেওয়া হবে না। তাদের ব্যাপারে আরও বেশি কঠোর থাকা হবে। আগামী নির্বাচনই হোক, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক আর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনই হোক— সব নির্বাচনেই এই নীতি অব্যাহত থাকবে। কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একবার দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে, তাদের অনেকের নাম এলেও আমরা কিন্তু মনোনয়ন দিচ্ছি না। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নৌকা প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর