Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পণ্য কিনে প্রতারিত হলে প্রতিকার মিলবে ভোক্তা আইনে

সারাবাংলা ডেস্ক
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:২৯

চটকদার বিজ্ঞাপনে পণ্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, প্রতিশ্রুত পণ্য না দেওয়া, পরিমাপে কারচুপিসহ ভেজাল বা নকল পণ্য বিক্রি— এ ধরনের কোনো প্রতারণার শিকার হলে ক্রেতার জন্য রয়েছে প্রতিকারের ব্যবস্থা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে অভিযোগ করার মাধ্যমে এই প্রতিকার পাওয়া যাবে। অভিযোগের প্রমাণ মিললে প্রতারণার দায়ে বিক্রেতাকে জেল-জরিমানার মুখেও পড়তে হবে। আর জরিমানা আদায় হলে তার একটি অংশ পাবেন অভিযোগকারী ক্রেতাও। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ক্রেতা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বারস পাওয়ার্ড বাই প্রিমিয়ার ব্যাংক’ অনুষ্ঠানে আইনজীবীরা এসব কথা বলেন। সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত এই আয়োজনের এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল— ‘ভোক্তা হিসেবে আপনার অধিকার কতটুকু?’

সারাবাংলা লিগ্যাণ চেম্বারসের এ পর্বে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদি হাছান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিন।

আইনজীবীরা জানান, সাধারণ ভোক্তাদের দৈনন্দিন কেনাকাটার অধিকার সংরক্ষণের জন্য ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী ওই বছরের ৮ জুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৯ সদস্যের একটি ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ গঠন করা হয় হয়।

ব্যারিস্টার মেহেদি হাছান চৌধুরী বলেন, পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারণার স্বীকার হলে তার জন্য ক্রেতার অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে। যেসব বিষয়ে একজন ক্রেতা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— বিক্রেতার পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, পণ্য মজুত করা, ভেজাল পণ্য বিক্রি, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করা, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, দৈর্ঘ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে গজফিতায় কারচুপি, নকল পণ্য উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি ও অবহেলা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পণ্য বা সেবা বিক্রিতে অনিয়ম করলে জড়িতদের জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। প্রতিশ্রুত পণ্য না পেলে ভোক্তা অধিকারে প্রমাণসহ অভিযোগ করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আর জরিমানা আদায় হলে সেখান থেকে অভিযোগকারী পাবেন ২৫ শতাংশ অর্থ।

পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারণার শিকার হলে তার জন্য অভিযোগ করতে হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায়। ব্যারিস্টার মেহেদি বলেন, পণ্য ঠিকমতো না পেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় অভিযোগ করতে পারেন যে কেউই। অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার মাধ্যমে মনোনীত কোনো ব্যক্তির কাছে ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রমাণ হিসেবে অর্থ পরিশোধের রিসিট দেখাতে হবে। প্রতারণা প্রমাণের ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে পণ্যের বিবরণের স্ক্রিনশট বা প্রিন্টআউট নিয়ে রাখা যায় প্রমাণ হিসেবে। এক্ষত্রে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি নিজে যেমন অভিযোগ করতে পারেন, তেমনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কোনো প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ভোক্তাও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা ভোক্তা অধিকার আইনে বেশি বেশি অভিযোগ করে প্রতিকার চাইলে এই আইন দ্রুত কার্যকর হবে বলে মনে করেন মো. মেহেদি হাছান চৌধুরী। তিনি বলেন, মহাপরিচালকের অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযুক্তকে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতারের ক্ষমতা আছে। এছাড়াও তিনি যেকোনো স্থানে যেকোনো সময়ে প্রবেশ করতে পারেন বা মালামাল ক্রোক করতে পারেন। তাই বিক্রেতার অপরাধ প্রমাণিত হলে ভোক্তার ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর ওপর জরিমানার অর্থের ভাগ পাওয়ারও বিধান রয়েছে। তাই ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। তারা ন্যায় বিচার পেতে যত বেশি অভিযোগ করবেন, দেশে ভোক্তা অধিকার আইন তত বেশি দ্রুত কার্যকর হতে পারে।

বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে পণ্য ফেরতের কোনো বিধান নেই বলে জানান অনুষ্ঠানের বিশেষ আলোচক ব্যারিস্টার এম শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ফেরত নেওয়ার বিধান থাকলেও বাংলাদেশের আইনে এমন কোনো ধারা যুক্ত নেই। দেখা যায়, এখানে একবার পণ্য কিনলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটি পরিবর্তন করা যায় কিন্তু রিটার্ন বা ফেরত দেওয়া যায় না। পণ্য পরিবর্তনের সুযোগও দেয় অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান। তাই আইনে পণ্য ফেরত দেওয়ার সুযোগ রেখে সংশ্লিষ্ট ধারা যুক্ত করতে পারলে ভালো হবে।

ভ্যাট বা সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেটি আইনিভাবে অন্যায্য নয় বলে জানান ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোনো খাবার বা পণ্য গায়ের দামে বিক্রি না করা অপরাধ। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি— ভ্যাট বা ট্যাক্স যোগ করে বাড়তি দাম নেওয়া হলে সেটি আইনিভাবে অন্যায় নয়।’ সুপারশপ বা তারকা হোটেলে পণ্য বা সেবার বাড়তি দাম রাখার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য না পান তিনি। সার্ভিস চার্জের জন্য ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন হবে না।

সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয় লিগ্যাল চেম্বারস অনুষ্ঠানটি। লাইভে যুক্ত হয়ে দর্শকদের অনেকেই আইনজীবীদের কাছে এই আইন সংশ্লিষ্ট নানা প্রশ্ন রাখেন। ক্যাবল টিভি সংযোগ বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ক্ষেত্রে এই আইন কীভাবে প্রযোজ্য হবে, সেটিও জানতে চান কেউ কেউ।

এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলেন, এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করা যাবে যদি আগে থেকে সেবাদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে কোনো চুক্তি হয়ে থাকে। ক্যাবল টিভির ক্ষেত্রে নির্দিষ্টসংখ্যক চ্যানেল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি লিখিত চুক্তির মাধ্যমে হয়ে থাকলে ওই পরিমাণ না পেলে অভিযোগ করা যাবে। আবার ইন্টারনেটের গতি কতটা হবে, বিষয়ে লিখিত চুক্তি থাকলে প্রতিশ্রুত গতি না পেলেও অভিযোগ করা যাবে। এসব বিষয়ে (ক্যাবল টিভির চ্যানেল সংখ্যা বা ইন্টারনেটের গতি) লিখিত প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নিশ্চয়তা না দেওয়া থাকলে সেটি নিয়ে অভিযোগ করা কঠিন।

অনলাইনে পণ্য কিনেও অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। অস্বাভাবিক কম দামে পণ্য সরবরাহ, ছোট করে শর্ত লেখার মতো নানা শর্তের মাধ্যমে এমন প্রতারণা চলছে। আইনজীবীরা বলেন, এ ক্ষেত্রেও প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে। কোনো ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যক্তি নিজে, একাধিক ব্যক্তি মিলে বা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বার

বিজ্ঞাপন

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর