Wednesday 04 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেরুর কারাবন্দি মাওবাদী নেতা গুজম্যানের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:০৪ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:৫১

পেরুর মাওবাদী বিদ্রোহী গ্রুপ শাইনিং পাথ এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাবিমায়েল গুজম্যান কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ থাকার পর শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) কারাগারেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে সরকারি কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, ১৯৯২ সালে রাজধানী লিমা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারে সন্ত্রাসী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গুজম্যানকে বাকি জীবন কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারের ২৯ বছর পূর্তির এক দিন আগেই ৮৬ বছর বয়সে পেরুর দুর্ধর্ষ মাওবাদী গেরিলা গুজম্যানের মৃত্যু হলো বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এ ব্যাপারে পেরুর কারা প্রধান সুসানা সিলভা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গুজমান বেশ কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন। আগস্টের প্রথম দিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। দুই দিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শনিবার তাকে ফের হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু তার আগেই স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে দিকে নিজের কারাকক্ষেই তার মৃত্যু হয়।

পেরুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়ালতের আইয়ালা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সকালে গুজমানের মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি জানতে পেরেছেন।

প্রসঙ্গত, দর্শনের সাবেক অধ্যাপক গুজম্যান ছিলেন আজীবন কমিউনিস্ট। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে তিনি চীনে গিয়েছিলেন। সেখানে চীনের নেতা মাও সে তুংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লব দেখে বিস্মিত হয়ে তিনি শ্রেণী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পেরুতে মাওবাদী কমিউনিজম প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ হন। কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে ১৯৮০ সালে সমর্থকদের একটি দলকে আয়াকুছো শহরের নিকটবর্তী আন্দিজ পর্বতমালায় নিয়ে যান। সেখানে গুজমান সেনদেরো লুমিনোসো (উজ্জল পথ) বা শাইনিং পাথ গেরিলা দল প্রতিষ্ঠা করেন।

বিজ্ঞাপন

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সামরিক একনায়কত্বের কবলে থাকার পর ১৯৮০ সালের যে দিনটিতে পেরুতে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল সেদিনই শাইনিং পাথের বিপ্লবী অভিযান শুরু হয়। শাইনিং পাথের গেরিলারা শটগান, ডায়নামাইট ও চাপাতি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, নির্বাচিত কর্মকর্তা ও তাদের মতাদর্শের বিরোধিতাকারী কৃষকদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে। এমন তীব্র অনুপ্রেরণা ও নির্মমতা নিয়ে তারা লড়াই শুরু করে যা এর আগে লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

আয়াকুছো শহর ছাড়িয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া শাইনিং পাথের দিকে হাজার হাজার গরীব কৃষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হয়। সাধারণ কৃষক ও কট্টরপন্থি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা দলটিকে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে অদম্য গেরিলা বাহিনীতে পরিণত করেন গুজম্যান।

১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে প্রধানত দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে শাইনিং পাথের বিদ্রোহের মাধ্যমে পেরুতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় প্রায় ৬৯ হাজার লোক মারা যায়। শাইনিং পাথের সাহসী ও নিখুঁত পরিকল্পিত আক্রমণ, এর চর ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং গুজম্যানের গ্রেফতার এড়ানোর অস্বাভাবিক ক্ষমতার কারণে তিনি এক সময়েই সব জায়গায় আছেন বলে মনে করা হতো। এই চর্চা তাকে প্রায় কিংবদন্তির খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৮১ সালে রাজধানী লিমার বাসিন্দারা প্রথম শাইনিং পাথের প্রত্যক্ষ পরিচয় পায়। ওই সময় দলটির গেরিলারা বহু কুকুর মেরে লিমার ল্যামপোস্টে ঝুলিয়ে দেয় এবং সেগুলোর গায়ে ‘পুঁজিবাদের কুকুর’ শ্লোগান সেঁটে দেয়।

১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে গেরিলা দলটি পেরু রাষ্ট্রের জন্য এতটাই হুমকি হয়ে উঠেছিল যে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ লোক জরুরি অবস্থা বা সামরিক আইনের অধীনে বাস করতে একরকম বাধ্য হয়। বছরের পর বছর লড়াই চলার সময় গুজম্যানকে নিয়ে নানান গুজব ছড়ায়। কখনো তার মৃত্যু হয়েছে বা তিনি গুরুতর অসুস্থ এমন কথা আবার কখনো কখনো তিনি ইউরোপে আরামদায়ক জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানা যায়। তার অনুসারীরা তাকে কার্ল মার্ক্স, লেনিন এবং মাওয়ের পর মার্কবাদের চতুর্থ তরবারি বলে ডাকত এবং বিপ্লবী মন্ত্রে, গানে, পোস্টারে ও সাহিত্যে তাকে শ্রদ্ধা, সম্মানে ভরিয়ে তুলত।

তার লেখা অল্প কিছু বই শাইনিং পাথ অনুসারীদের কাছে মন্ত্রের মতো হয়ে উঠেছিল। তবে তার এসব বই মার্ক্সবাদী পণ্ডিতদের তেমন নজর কাড়েনি। আশির দশকের শেষ দিকে গুজম্যানের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান শুরু হলেও শাইনিং পাথের হামলার তীব্রতা বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে পেরুর ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরি বিদ্রোহ দমনের কথা বলে প্রায় একনায়কসুলভ ক্ষমতা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন।

১৯৯২ সালে লিমার একটি মধ্যবিত্ত আবাসিক এলাকার সন্দেভাজন নিরাপদ আস্তানা থেকে পুলিশ গুজম্যানকে গ্রেফতার করে। তারপর বিচারে তার আজীবন কারাবাসের দণ্ড হয়। সেই কারাবন্দি অবস্থায়ই তার মৃত্যু হলো।

সারাবাংলা/একেএম

কারাবন্দি মাওবাদী নেতা গুজম্যান পেরু শাইনিং পাথ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর