‘ভাত-কাপড়ের অভাবে’ ভালো নেই খাগড়াছড়ির গারোরা
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০৪
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির অন্য নৃগোষ্ঠীরা যখন ইতিহাস-ঐতিহ্য বা অধিকার নিয়ে সরব, তখন জেলার রামগড়ে শতাধিক গারো জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের সংগ্রাম ভাত ও কাপড়ের জন্য। বিগত কয়েক দশকে এ অঞ্চলের অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও পাল্টেনি গারোদের জীবন। শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার চাপা পড়েছে অভাব-অনটনে।
জানা গেছে, পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাড়াও গারো সম্প্রদায়ের বসবাস বিগত ৪ দশক ধরে। খাগড়াছড়ির রামগড়ে শতাধিক গারো জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী এসব গারোরা পিছিয়ে পড়ছে সব ক্ষেত্রে। সরকার এ অঞ্চলে বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ শুরু করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর। সে সময় গারোদের প্রতিনিধিত্ব করার মত কেউ না থাকায় এ জাতিগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে। রামগড়ে বসবাসকারী এসব গারো জনগোষ্ঠীর দিন কাটছে অভাব অনটনে। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত গারোরা সমতলের গারোদের মতো সুযোগ-সুবিধা দাবি করছেন।
দানিয়েল চাবুগং, রাহেলা হালদার, রত্না হালদার, মাইকেল হালদারসহ অন্যরা বলেন ‘অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সকলক্ষেত্রে পিছিয়ে গারো সম্প্রদায়ের লোকজন। শ্রম দিয়ে দিনমুজুরি করে বেঁচে আছেন কোনমতে। অনেকের ভালো একটি থাকার ঘরও নাই, অন্য মৌলিক অধিকার তো পরের কথা। গারো জনগোষ্ঠী সরকারের পৃষপোষকতা পাচ্ছেন না।’ তাই জীবনমান উন্নয়নে সব ক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন তারা।
গারো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা ফিলিপস হালদার বলেন, ‘২০১৭ সালে গারোসহ ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও পর্যায়ক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও খাগড়াছড়ির গারো শিশুরা এখনও বঞ্চিত এ সুযোগ থেকে। এ বিষয়ে কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছে না খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ। সরকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করলেও খাগড়াছড়িতে বসবাসরত গারোরা সব সুবিধা হতে বঞ্চিত। শিক্ষা-চাকুরিসহ স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিত্বসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে গারো সম্প্রদায়।’
গারোদের জমিও এলাকার প্রভাবশালীরা দখল করে নিচ্ছে অভিযোগ করে এ নেতা বলেন, ‘গারো সম্প্রদায়কে বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা দিয়েও করা হচ্ছে ভূমিহীন। এই বিষয়ে প্রশাসনে বারবার অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না।’ এসময় তিনি খ্রিস্টান ধর্মের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে এবং তাদেরকে যেন প্রভাবশালীরা ভূমিহীন করতে না পারে সে জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন ফিলিপস হালদার।
রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি বলেন, ‘সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর জন্য কাজ করছে। রামগড়ে বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের জীবনমান পরিবর্তন হবে বলেও আশা করেন এই জনপ্রতিনিধি। তবে গারোদের ভূমিহীন করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মং শি প্রু চৌধুরী বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে গারো শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় পড়া নিশ্চিতে কাজ করছে জেলা পরিষদ। সরকারের শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে গারো শিশুদের মাতৃভাষায় বই থাকে, তাহলে তা খাগড়াছড়িতেও চালু হবে।’ তাছাড়া চাকরি ও অন্যান্য কর্মসংস্থানে গারোরা আবেদন করলেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
সারাবাংলা/এমও