শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর বরিশালের স্কুল-কলেজ
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৪১
বরিশাল: সকাল থেকেই বরিশালের প্রতিটি রাস্তায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। স্কুলের প্রিয় পোশাকটি গায়ে জড়িয়ে ছুটছিল স্কুলের পথে। স্কুল-কলেজের সামনে আবার সেই অভিভাবকদের জটলা। ফুটপাতে পত্রিকা বিছিয়ে চলছে তাদের খোশগল্প। প্রায় দেড় বছর পর নগরীর রাস্তায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ল। দেড় বছর পর আজই যে খুলেছে স্কুল-কলেজ।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সারাদেশের মতো বরিশালেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিয়ে কড়াকড়িও ছিল চোখে পড়ার মতো।
সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড রোদ-গরম উপেক্ষা করেই স্কুল-কলেজগুলোর ফটকের সামনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা সময়মতো হাজির হয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে দেখা যায়। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো স্কুল-কলেজগুলোর সামনে ঝালমুড়ি, চানাচুরসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো বসতে দেখা যায়নি।
বরিশাল জেলা স্কুলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। এরপর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তারপরই তারা শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে পারছে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্কুল ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাইরে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি শিশুদের সঙ্গে অভিভাবক যারা এসেছিলেন, তারাও কেউ ঢুকতে পারেননি স্কুল ক্যাম্পাসে।
জেলা স্কুলে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও রোববার ক্যাম্পাস ছিল অনেকটা ফাঁকা। কারণ প্রথম দিন ক্লাস হয়েছে কেবল এসএসসি পরীক্ষার্থী ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। এই দুইটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই আসতে হবে স্কুলে। বাকি শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীরা আসবে সপ্তাহে এক দিন করে।
দীর্ঘ দিন পর স্কুলে আসতে পেরে এবং সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলা রাখার পক্ষেই অবস্থান তাদের। আগে অনলাইনে ক্লাস হলেও এখন সরাসরি ক্লাসে পড়ালেখায় মনোযোগ আরও বাড়বে— এমনটিও বলছে শিক্ষার্থীরাই।
স্কুলের ছাত্রী আইরিন আক্তার বলছে, এতদিন পর বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে দেড় বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। তাই নিজের স্কুলটাকেও কিছুটা অচেনা লাগছে। এই দেড় বছরে যাদের সঙ্গে একেবারেই দেখা হয়নি, তাদের অনেকেরও চেহারা অনেকটাই বদলে গেছে। এ এক নতুন অনুভূতি।
সন্তানরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অভিভাবকরাও। শিশু শিক্ষার্থীদের দিনের পর দিন বাড়িতে ‘বন্দি’ রাখাটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে মনে করছেন। তাছাড়া স্কুল খোলা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরেও পড়ছিল। সে অবস্থা থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে স্কুলগুলো খোলা রাখলে সেটি শিক্ষার্থীদের কাজে আসবে বলেই মত তাদের। স্কুলে প্রথম দিনের সার্বিক ব্যবস্থাপনাতেও খুশি তারা। করোনা থেকে সুরক্ষায় এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে— এটিই তাদের প্রত্যাশা।
অভিভাবক সুলতানা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ অনেক কষ্ট করে স্কুলে আসতে হয়েছে। রিকশা পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর আবার স্কুলের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাও বিড়ম্বনা। তবে এত দিন পর মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, সঙ্গে তো যেতেই হবে।’
সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসা হাবিবুন নাহার বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ে শঙ্কা তো আছেই। তারপরও স্কুল খোলারও দরকার ছিল। বাড়িতে অনলাইন ক্লাস করেছে। কিন্তু অনলাইন ক্লাস আর সশরীরে ক্লাসের মধ্যে পার্থক্য তো আছেই। আশা করছি এবারে স্কুলে আরও ভালোভাবে পড়ালেখা করবে। স্কুলেও যেন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ঠিকমতো হয়, সেটি নজরদারি করতে হবে।
এদিকে, দীর্ঘ দিন ঘরে বন্দি থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ কম হয়েছে বলে মনে করেন বরিশাল জিলা স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ফাহমিদা বেগম। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ও উচ্ছ্বাসেও ঘাটতি রয়েছে বলে প্রথম দিন মনে হয়েছে তার কাছে। যদিও পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে বলে তিনি জানান।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রথম দিন ভালোভাবেই অতিবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় শিক্ষার্থীরা খুব বেশি ছোটাছুটি করতে পারেনি। তবে স্কুলে আসতে পেরে তারা খুব খুশি। আপাতত পঞ্চম ও দশম শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে ছয় দিন করে। বাকি শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে আসবে।
বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা শতভাগ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন তারা। বিগত দিনে পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষের বাড়তি নজর থাকবে বলে তিনি জানান।
স্কুলের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে সকালে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সোহেল মারুফ। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই আমরা। প্রথম দিনের সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। আশা করছি এভাবেই করোনাবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সারাবাংলা/টিআর