গরুর জন্য টয়লেট নির্মাণ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৫১
নিউজিল্যান্ডে গরুদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রস্রাব করার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন গবেষকরা। এজন্য তারা একটি বিশেষ টয়লেটও নির্মাণ করেছেন। পরে ওই টয়লেটে প্রস্রাব করার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য গরুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। খবর এনডিটিভি।
গরুর প্রস্রাব নিয়ে রসিকতা করতে গিয়ে এই গবেষণার ধারণা মাথায় আসে বলে স্বীকার করেছেন নিউজিল্যান্ড এবং জার্মানির এই গবেষকরা। তারা বলেছিলেন, গরুর নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ তরল বর্জ্য নিয়ে কাজ করলে সত্যিকার অর্থে দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ুর জন্য উপকার হতে পারে।
দেশটির অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ডগলাস এলিফ বলেন, ‘আমরা যদি ১০ অথবা ২০ শতাংশ প্রস্রাব সংগ্রহ করতে পারি। তাহলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এবং মাটিতে নাইট্রেটের শোষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমান যাবে।’
তিনি বলেন, একটি গরু প্রস্রাব করার পর তাতে থাকা নাইট্রোজেন দুটি পদার্থে ভাগ হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে নাইট্রাস অক্সাইড,যা অতিমাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের দায়ী এবং অপরটি হলো নাইট্রেট, যা মাটিতে শোষণ হওয়ার মধ্য দিয়ে নদী ও জলাধারে গিয়ে পড়ে।
দেশটির সরকারি তথ্যমতে, পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৫ শতাংশের জন্য দায়ী নাইট্রাস অক্সাইড। যেখানে মোট গ্রিনহাউজের গ্যাসের মধ্যে নিউজিল্যান্ড থেকে নির্গমন হয় ১০ শতাংশ। যার অর্ধেরও বেশি আসে গবাদিপশু থেকে।
গবেষক লিন্ডসে ম্যাথিউস বলেন, ২০০৭ সালে রেডিওর একটি অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারের সময় রসিকতার ছলে গরুকে টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাব করার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ধারণাটি মাথায় আসে। যাতে করে গরুর প্রস্রাব সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা যায়।
তিনি বলেন, ‘তখন মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল পাগল বিজ্ঞানী। কিন্তু সেই অবকাঠামো আজ বাস্তব।’
ম্যাথিউস আরও বলেন, তিনি জার্মানিতে তার সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করেন। এজন্য তারা ১৬টি বাছুরকে বেছে নেয়। তাদের প্রতিদিন প্রস্রাবের জন্য টয়লেট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ কাজের পুরষ্কার হিসেবে টয়লেটে খাবার দেওয়া হতো বাছুরগুলোর জন্য। এক্ষেত্রে তিন বছরের বাচ্চার কাছে যে ধরনের সফলতা আসত, ঠিক একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে।
গবেষক ডগলাস এলিফ বলেন, চলতি সপ্তাহে কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে এই ‘ধারণার পক্ষে প্রমাণ’দেওয়া হয়েছে যে,গরুকে টয়লেটের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব।
তবে বিশাল গরুর পালকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া একটি বিশাল বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে, যেখানে অধিকাংশ সময় গরুগুলো মাঠে চরে।
নিউজিল্যান্ডের মতো খামার অর্থনীতি নির্ভর দেশে মোট গ্রিনহাউজের প্রায় ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ আসে মিথেন গ্রাস থেকে। যা জীবাশ্ম জ্বালানির মতো উৎস হতে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রায় সমান।
সারাবাংলা/এনএস