চট্টগ্রাম ব্যুরো: সন্তানদের ভরণপোষণ জোগাতে ‘খুনি’সেজে তিনবছর ধরে জেল খেটে বের হয়ে করুণ মৃত্যুর শিকার সেই মিনু আক্তারের দুই সন্তানের দায়িত্ব নিচ্ছে কেএসআরএম। শিল্প প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে এই আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে। আর জেলা প্রশাসকও এতে সম্মতি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত এতিম দুই সন্তানের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মৃত মিনু আক্তারের দুই ছেলে আছে। এতিম শিশু দু’টি খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন বলে পত্রপত্রিকায় দেখেছি। কেএসআরএম’র পক্ষ থেকে তাদের ভরণপোষণের যাবতীয় ব্যয় বহনের একটি প্রস্তাব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমরা শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দায়িত্বভার দেব।’
মিনু আক্তারের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ময়নামতি এলাকায়। তিনি সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় থাকতেন। তার স্বামী ট্রাকচালক বাবুল আক্তার ২০১৮ সালে মারা যান।
২০০৬ সালের ২৯ মে নগরীর কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় পারভিন আক্তার নামে এক পোশাক কর্মীকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পুলিশ তদন্তে পায়, মোবাইল নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশি কুলসুম আক্তার তাকে খুন করেন। ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কুলসুমকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে পলাতক হয়ে যান। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
পলাতক থাকা অবস্থায় কুলসুম জানতে পারেন, তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তিনি পরিচিত কয়েকজনের মাধ্যমে সদ্যবিধবা হতদরিদ্র মিনু আক্তারকে খুঁজে বের করেন। সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার প্রস্তাবে অসহায় মিনু রাজি হয়ে কুলসুম সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে কুলসুমের পরিচয়ে কারাগারে ছিলেন মিনু। বিষয়টি জানাজানির পর চট্টগ্রাম আদালতের একজন আইনজীবী এ বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট চলতি বছরের ৭ জুন মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন। ১৬ জুন মুক্তি পান। ২৯ জুন রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার লিঙ্ক রোডে আরেফিন নগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু।
মৃত মিনু আক্তারের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ইয়াসিন (১২) আছে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিশু কিশোর সংশোধনাগারে। ছোট ছেলে গোলাপ (৯) আছে দিনমজুর মামার আশ্রয়ে।
কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে মিনু আক্তারের দুই সন্তানের অসহায় অবস্থার খবর দেখে কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই আগ্রহের কথা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। মূলত জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কেএসআরএম পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। কেএসআরএম চায়- হতভাগ্য মিনু আক্তারের অনাথ দুই সন্তান যেন সমাজের নিষ্ঠুরতার বলি না হয়। তারা যেনো পৃথিবীর আলো বাতাসে অন্য দশটা শিশুর মতো হেসে খেলে বড় হতে পারে। পৃথিবী ও জীবনের প্রতি যেন তাদের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি না হয়।’