‘মহামারির ধাক্কা কাটাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন’
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২৩
ঢাকা: বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন (বিএমজিএফ) তাদের পঞ্চম বার্ষিক গোলকিপারস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অসম প্রভাব উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের ঐকান্তিক প্রচষ্টোর ফলে প্রবল অঘটন এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এখন বৈশ্বকি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং সার্বিকভাবে এ অতিমারি বা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন।
বিএমজিএফ’র পঞ্চম বার্ষিক গোলকিপারস প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ অতিমারি কীভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা বিস্তারিত তথ্যসহকারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিএমজিএফ’র কো-চেয়ার বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস যৌথভাবে এবারের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। কোভিড-১৯ সমাজে যেসব অসম প্রভাব ফেলেছে তা এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অতিমারিতে যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে। করোনার কারণে ২০১৯-এর তুলনায় ২০২১ সালে আরও তিন কোটি ১০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্রের মুখোমুখি হয়েছেন। আর্থিক দিক থেকে উন্নত ৯০ শতাংশ দেশের নাগরিকের মাথাপিছু আয় আগামী বছরের মধ্যে অতিমারির আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মাত্র এক তৃতীয়াংশই আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে। তবে আশার কথা হল, বিশ্বের মানুষ এই ধ্বংসলীলা মোকাবিলা করেছে, তাই আরও খারাপ কিছু হওয়া আটকানো গেছে।
গত বছরের গোলকিপারসের প্রতিবেদনে ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই )’ অনুমান করেছিল, বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন প্রদান ১৪ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। যার ফলে মাত্র ২৫ সপ্তাহে ২৫ বছরের অগ্রগতি হারিয়ে যাবে। তবে আইএইচএমই’র নতুন বিশ্লেষণ অনুযায়ী লেখচিত্র নিম্নমুখী হলেও পরিস্থিতি যতটা খারাপ হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, বাস্তবে ঘটেছে তার অর্ধেক।
এ বছরের প্রতিবেদনে ‘যুগান্তকারী উদ্ভাবন’র উপর অধিক আলোকপাত করেছেন প্রতিবেদন প্রনয়ণকারী বিল গেটস ও মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস। গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা,প্রতিশ্রুতিপূরণ এবং বিনিয়োগের ফলেই এ ‘যুগান্তকারী উদ্ভাবন’ সম্ভব হয়েছে। তবে খুব খারাপ কিছু হওয়া যে আটকানো গেছে, তা প্রশংসনীয় হলেও যথেষ্ট নয় বলে তারা প্রতিবদেনে উল্লেখ করেছেন।
যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই অতিমারির ধাক্কা সার্বিকভাবে কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য এবং আর্থিক খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ওই প্রতিবেদনে আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এর মধ্য দিয়েই জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ পুরণের পথে বিশ্বকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়াররা।
প্রতিবেদনে তারা লিখেছেন, ‘(গত বছর) আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে- অগ্রগতি অপরিহার্য এবং সম্ভব। বিগত ১৮ মাসে যে বিষয়গুলোতে আমরা ভালো করেছি,সেগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে আমরা অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মৌলিক বিষয়গুলোর অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে পারব।’
এ প্রতিবেদনে আরও একটি বিষয় গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। অতিমারির প্রভাবে সারাবিশ্বে আর্থিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নারীরা। উচ্চ আয়ের দেশ হোক বা নিম্ন আয়ের দেশ, অতিমারির ফলে যে আর্থিক মন্দা তৈরি হয়েছে তাতে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মেলিন্ডা গেটস বলেন, ‘এমনিতেই বিশ্বের নানা স্থানে নারীরা নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হন। অতিমারি সেই বাধাবিপত্তিগুলোকে আরও জোরাল করেছে।’ তার মতে,‘বিভিন্ন দেশের সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের উন্নয়নে জোর দেওয়া, যাতে তাদের সামনের বাধা এবং বৈষম্য দূর করা যায়। এতে যে শুধু সার্বিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে তাই নয়, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে। এটা করা যে শুধু ঠিক তাই নয়, বরং এমনটা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ এবং এতে সবাই লাভবান হবে।’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যে দ্রুত গতিতে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে তা কোনো ‘আশ্চর্য’ ব্যাপার নয়। গত কয়েক দশক ধরে চলমান বিনিয়োগ, ভ্যাকসিন নীতি এবং সহযোগিতার মাধ্যমে যে পরিকাঠামো, পরিবেশ এবং প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছে- তারই ফল হচ্ছে দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস
করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন মহামারির ধাক্কা