Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সপ্তাহে ৪দিন বিমানে কক্সবাজার যেতেন কম্পিউটার অপারেটর নুরুল

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:৫০

ঢাকা: অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে গ্রেফতার টেকনাফ কাস্টমসের সাবেক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম ঢাকা থেকে সপ্তাহে চার দিন কক্সবাজারে যাতায়াত করতেন বিমানে। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেতেন নিজের প্রাডো গাড়িতে। আবার কক্সবাজার থেকে বিমানে এসে ওই গাড়িতেই বাসায় ফিরতেন।

একইভাবে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার পর সেখানে থাকা আরেকটি বিলাসবহুল গাড়িতে উঠে টেকনাফ বন্দরে পৌঁছতেন। আবার ওই একই গাড়িতেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে আসতেন। তাকে আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো বিলাসবহুল দুটি গাড়ি। সম্প্রতি সারাবাংলার অনুসন্ধানে নুরুল ইসলাম সম্পর্কে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

নুরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটির চারদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। কেউ তার খোঁজ করতে এলে সে বিপাকে পড়ে যায়। কখনও কখনও খোঁজ নিতে আসা ব্যক্তিতে ধরে নুরুলের লোকজন মারধর করতো। তার পর ভেতরে নিয়ে গিয়ে জীবন নাশের হুমকিও দিত তারা। যে বাসাটিতে তিনি থাকতেন সেই বাসাটিও ছিল রাজকীয়। তিনি সব সময় সান গ্লাস পড়ে থাকতেন।

জানা যায়, নুরুল ইসলাম বেশিরভাগ সময় বাসার ভেতরেই থাকতেন। কোথাও বের হলে গাড়িতে করেই যেতেন। কোথাও তিনি সহজে নামতেন না। জন সমাগমে মিশতেন না। কোনো দাওয়াতেও যেতেন না। কোথাও তিনি পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের অবস্থান করতেন না। কোনো হোটেল-রেস্তোরায় বসতেন না। অর্থাৎ সবসময় তিনি আড়ালে আবডালে থাকার চেষ্টা করেছেন। চোরের মতো নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন নুরুল ইসলাম। তার সব কাজ ম্যানেজার বাবুল ও মোল্লাকে দিয়ে করাতেন। এমনকি বাবুলের স্ত্রীও সবরকম কাজ করতেন। বাবুল মূলত জমি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। তিনি জমি-জমার দর-দাম ঠিক করতেন। নুরুল ইসলাম সব জমি, প্লাট, বাগান বাড়ি বাবুলকে দিয়েই কিনেছেন। এই ফাঁকে বাবুল নিজেও অনেক সম্পত্তি করেছেন। তারও রয়েছে বাড়ি-গাড়ি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরের ওই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই নুরুল ইসলামকে চেনেন এবং জানেন। তিনি যে কালো রঙের প্রাডো গাড়িতে চড়ে বেড়াতেন সেটিও অনেকের চেনা। র‌্যাব তাকে গ্রেফতারের সময় প্রাডো গাড়িটি কেন জব্দ করেনি- তা জানা যায়নি। এছাড়া টেকনাফ এলাকায় যে বিলাসবহুল গাড়িটি চালাতেন সেটিও জব্দ করা হয়নি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে দুটি গাড়ির কথা বলছেন সেগুলো এখনও জব্দ করা হয়নি। তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে গাড়ির বিষয় এলে সেগুলোও জব্দের তালিকায় আনা হবে।

নুরুল ইসলামকে ধরতে অভিযান চালিয়েছেন র‌্যাব-৩-এর অপারেশন অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রাণী দাস। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নুরুল ইসলামকে গতকাল রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে, অন্যটি মাদকের মামলা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুরুল ইসলামকে এলাকার লোকজন আগে থেকেই সন্দেহ করতেন। তিনি গাড়ি ছাড়া এক কদমও নড়তেন না। কক্সবাজারে যাতায়াত করতেন বিমানে করে। মানুষের সঙ্গে মিশতেন না। কারও সঙ্গে কথা বললেও সেখানে ৫/১০ মিনিটের বেশি দাঁড়াতেন না। তাকে ঘিরে প্রায় সবাই রহস্যের গন্ধ পেতেন।

আবার কেউ সম্পত্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেই ভয়ভীতি দেখাতেন। বলতেন, সব সম্পত্তি এনবিআর-এ কর দিয়ে হালাল করে নিয়েছেন। তার কাস্টমস কর্মকর্তা আছেন, যিনি সবকিছু দেখভাল করেন। তার বাঘা বাঘা আইনজীবী আছেন, যারা তার সবকিছু দেখেন।

নুরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নুরুল ইসলাম এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তদন্ত করলে হয়তো আরও সম্পত্তির খোঁজ মিলতে পারে।

র‌্যাব জানায়, নুরুল ইসলাম বর্তমানে একটি জাহাজ কেনার জন্য আলাপ-আলোচনা করছিলেন। সেইসঙ্গে সাভারে একটি বিনোদন কেন্দ্রের জন্য প্রায় একশ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল তার। সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, নুরুল ইসলাম সুন্দরবন-১০ মানের অত্যাধুনিক বিলাসবহুল একটি লঞ্চ কেনার জন্য চুক্তি করেছিলেন। ঢাকা থেকে ভোলা রুটে ওই লঞ্চটি চলাচল করার কথা ছিল। কেরানীগঞ্জের একটি ডগ ইয়ার্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী তিনি ইতোমধ্যে প্রায় কোটি টাকার মতো বিনিয়োগও করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুরুল ইসলামে সাভারে একটি বাগান বাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি একটি বিনোদন কেন্দ্রের জন্য তার বিনিয়োগ করার কথা ছিল প্রায় শত কোটি টাকা। ওই বিনোদন কেন্দ্রের জন্য তিনি ইতোমধ্যে জমি কেনা বাবদ ১০ কোটি টাকার মতো খরচও করেছেন। তবে এর সবকিছুই ভেস্তে গেছে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়ার পর।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর