নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় বিমানের পাইলটরা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:১৯
ঢাকা: সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানের পাইলট নওশাদ আতাউল কাউয়ুম মধ্য আকাশে হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে মৃত্যর ঘটনায় পাইলটদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এবং বেবিচকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আওতায় থাকছেন বিমান পাইলটরা।
যে সব পাইলটের বয়স ৪০ বছরের বেশি তাদের বছরে দুইবার এবং যাদের বয়স ৪০ বছরের কম তাদের বছরে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। আর কোনো পাইলট যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আনফিট থাকেন তাহলে সেই পাইলট বিমান পরিচালনার জন্য লাইসেন্স পান না। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি একজন বিমান পাইলটকে অবশ্যই মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হয়।
কোনো পাইলট যদি মানসিকভাবে বিমান ফ্লাই করার আগে বিষণ্ন থাকেন তাহলে সেই পাইলটকে কোনো এয়ারলাইন্স ফ্লাই করাতে বাধ্য করা যাবে না বলে সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, প্রথমে যখন একজন পাইলট কোনো এয়ারলাইন্সে যোগদান করেন তখন সেই পাইলটকে মানসিকভাবে সুস্থ আছেন কিনা সেটার পরীক্ষা দিতে হয় একজন চিকিৎসকের কাছে। সেই চিকিৎসক নানাভাবে পাইলটের মানসিক পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেন। ফলে একজন পাইলটকে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিক- দুই দিক থেকেই সুস্থ থাকতে হয়।
শুধু তাই নয়, বিমান পাইলটদের লাইসেন্সের জন্য প্রতি ৬ মাস পরপর সিমুলেটর ট্রেনিং করতে হয়। যেখানে বিমান উড্ডয়ন এবং চলাচলরত অবস্থায় যেসব সমস্যা হতে পারে তার সমগ্র সমস্যার মধ্য দিয়ে ট্রেনিং সময়টা পার করতে হয়। আর এই সিমুলেটর ট্রেনিং বিদেশে গিয়ে করতে হয়। যেখানে সিমুলেটর ট্রেনিংয়ে একজন পাইলটকে টাইপ রেটেড রিকারেন্ট ট্রেনিং বছরে ২ বার গুনতে হয় ৮-১০ লাখ টাকা। আর সিমুলেটর ইনিশিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য খরচ হয় ২০-২২ লাখ টাকা। আর এই টাকা বহন করে বিমান কোম্পানিগুলো। আর সিমুলেটর ট্রেনিংযে উর্ত্তীর্ণ হলেই একজন পাইলটকে বিমান পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হয়।
এ ছাড়া পাইলটদের যেসব স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেগুলো হচ্ছে, অ্যালকোহল টেস্ট, ব্লাড টেস্ট (ডায়াবেটিকস, কিডনি, ব্লাডসুগার, সিবিসি, ক্যান্সার পরীক্ষা এবং যৌন পরীক্ষা) করা হয়। একইসঙ্গে ইসিজি, অডিওগ্রাম (কানের শ্রবণশক্তি), চক্ষু টেস্ট, নাক, কান, গলা টেস্ট, এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইউরিন টেস্ট করা হয়। এগুলোর যে কোনো একটিতে সমস্যা হলে সেই বিমান পাইলট স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ (আনফিট) থাকেন। ফলে তাকেও বিমান পরিচালনায় লাইসেন্স দেওয়া হয় না। আর এই পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশে হয়ে থাকে সিএমএইচ, পপুলার হাসপাতাল, ল্যাবএইড ও মেডিনোভা হাসপাতালে। এমনকি এইসব পরীক্ষায় যেসব চিকিৎসক নিয়োজিত থাকেন তারা সবাই বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা, যারা ২০-৩০ বছর ধরে এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
অপরদিকে বিমানের একজন ফাস্ট অফিসারকেও (পাইলট) একইভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক পরীক্ষা এবং সিমুলেটর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর উর্ত্তীর্ণ হতে হয়। কেননা কোনো কারণে যদি প্রধান পাইলট অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে ফাস্ট অফিসার যেন বিমানটি ল্যান্ড করাতে পারেন।
বিমানের পাইলট হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞান শাখা থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থবিদ্যায় ভালো করতে হয়। এরপর যেকোনো একটি ফ্লাইংক্লাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে একজন ইন্সট্যাকটরের অধীনে ফ্লাইং শুরু করতে হয়। এরপর শুরু হয় তার পাইলট জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা।
পাইলটদের বিভিন্ন পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে বিমান পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইলট জীবনের চ্যালেঞ্জ শেষ সময় পর্যন্ত। যাদের বয়স ৪০ এর বেশি তাদের বছরে ২ বার আর ৪০ এর কম বয়স হলে বছরে ১ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া সিমুলেটর ট্রেনিং, ডোপ টেস্ট সবকিছুই করতে হয় নিয়মিত। ফলে পাইলট জীবন কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। এ পেশা মানেই নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। কেননা নিয়মের বাইরে যাওয়া মানেই সবার জন্য ক্ষতিকর। তাই পাইলটরা নিয়ম শৃঙ্খলাতে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।’
সারাবাংলা/এসজে/একে