Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৯ বছরেও শেষ হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেলের কাজ, আবারও সংশোধনী

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৩১

ঢাকা: স্বাস্থ্যের তিন বছরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে যাচ্ছে সাড়ে ১১ বছর। ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ প্রকল্পে দেখা গেছে এমন দীর্ঘসূত্রতা। এই অবস্থায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পটির ব্যয় বেঁড়ে দাড়াচ্ছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বর্তমান প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এ বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১২ সালে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয় তখন ২০০৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল। এটি ছিল প্রকল্পের অনেকগুলো ভুলের মধ্যে অন্যতম ভুল। এই ভুলগুলোর কারণে পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট সবোর্চ্চ পর্যায় থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেবাধর্মী এ রকম একটা প্রকল্পে দীর্ঘ সময় এবং এত টাকা বেশি খরচ হচ্ছে সেই দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্বাস্থ্য ও পরিববার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- মূল প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০১২ সালের ৬ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এরপর মোট ৬১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ বছর বাড়িয়ে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদিত হয়। এতেও শেষ হয়নি বাস্তবায়ন। ফলে ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটির আন্তঃখাত সমন্বয় করা হয়। কার্যক্রম বিভাগ ২০২০ সালের ২২ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর বৃদ্ধি করে।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৪২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০১২ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবের ওপর ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্তে সঠিকভাবে প্রতিপালন না করায় ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পুনর্গঠিত ডিপিপি চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থিত সভায় উপস্থাপিত হলে দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন না করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কারণ এবং দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ভালোভাবে পরীক্ষা করে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ফের একনেকে উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একনেক সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জানুয়ারি আইএমইডির সচিবকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গত ১ জুন আইএমইডি তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠানো পাঠায়।

প্রকল্পের সংশোধরে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত নির্মাণ কাজের পরিধি ও ব্যয় বৃদ্ধি, জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, যন্ত্রপাতি, যানবাহন, এমএসআর সামগ্রী এবং অফিস সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন কোড সংযোজন ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনের প্রয়োজন।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ২৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১২ হাজার ৫১৮ দশমিক ৭৬৬ বর্গ মিটার হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, ২ হাজার ৪৭০ দশমিক ১৭৮ বর্গমিটার একাডেমিক ভবন, ১ হাজার ৫ দশমিক ২৯৫ বর্গ মিটার হোস্টেল ভবন, এক হাজার ৫ দশমিক ২৯৫ বর্গ মিটার হোস্টেল ভবন মহিলা, ৩৯৮ দশমিক ৫৫ বর্গ মিটার ইন্টানি ডাক্তার ডরমিটরি পুরুষ, ৩৯৮ দশমিক ৫৫ বর্গ মিটার ইন্টার্নি ডাক্তার ডরমিটরি মহিলা, ৫টি যাবাহন, আসবাবপত্র সংগ্রহ এবং চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ইত্যাদি।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে আরও বলা হয়েছে, ভৌত কাজের ব্যয় বৃদ্ধি পিডব্লিউডির ২০১৮ সালের রেইট সিডিউল অনুসরণ। প্রকল্প কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা।

নতুন ভৌত কাজ সংযোজন: জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন। আনসার ও ড্রাইভার ব্যারাক কাম গ্যারেজ নির্মাণ। সাব স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হবে।

জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস: নতুন স্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ ১০ একর হতে ২ একর হ্রাস করে ৮ একর নির্ধারিত হওয়ায় জমির ব্যয় হ্রাসসহ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন। যন্ত্রপাতি ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় নতুন যন্ত্রপাতির অন্তর্ভুক্তিকরণ। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি। মেডিক্যাল অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিটস (এমএসআর) সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তনের কারণে নতুন কোড সংযোজন। বাস্তবায়ন মেয়াদ ৩ বছর বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ভৌত অবকাঠামোগুলোর নির্মাণকাজের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কুষ্টিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার জনগোষ্ঠীর উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

সারাবাংলা/জেজে/একে

কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর