Wednesday 02 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী বললেন লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবে ইসাবা


৩ এপ্রিল ২০১৮ ২১:১৯ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৪৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ইসাবা হাফিজ সুশ্মি। বয়স ১৬ বছর। বারিধারা এম এইচ স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ইসাবার ইচ্ছে, বড় বোনের মত লেখাপড়া করবে। কিন্তু লেখাপড়ার পরবর্তী ধাপগুলো চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ সে অটিস্টিক। ইসাবার মত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য এখনও কোনও কারিকুলাম না থাকায় তাকে এখানেই শেষ করতে হবে পড়াশোনা।

একইসঙ্গে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়ত তাকে মুখোমুখি হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতার। জীবনের প্রতিদিনের মুখোমুখি হওয়া এসব প্রতিবন্ধকতার কথা ইসাবা তুলে ধরেছিলেন তার বক্তেব্যে। তার বক্তব্যের সময় মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাক তাকিয়ে ছিলেন ইসাবার দিকে। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলেন ছোট্ট এ মেয়েটির হৃদয় নিঙড়ানো কথাগুলো। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী ইসাবাকে কাছে ডেকে নেন, কথা বলেন। আশ্বাস দেন সে পরীক্ষা দিতে পারবে, চালিয়ে নিতে পারবে তার পড়াশোনা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) মহাখালীর পিডিএফএ ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে কথা হয় সেই ইসাবা হাফিজ সুশ্মির সঙ্গে। ইসাবা জানায়, তার বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী তাকে কাছে ডেকে নিয়েছেন, এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে বলে তাকে আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার ( ২ এপ্রিল) ছিল ১১ তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। সে উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠান যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রথম সেলফ অ্যাডভোকেট হিসেবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করে ইসাবা হাফিজ।

ইসাবার সাড়ে পাঁচ মিনিটের বক্তব্য নাড়া দেয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে, ছুঁয়ে যায় প্রধামন্ত্রীকেও। তাইতো বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে আসার সময়ে তাকে কাছে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে কী কথা হল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জানতে চাইলে ইসাবা সারাবাংলাকে বলে, প্রধামন্ত্রীর প্রোগ্রামে গিয়েছি, দাঁড়িয়ে স্পিচ দিয়েছি। বলেছি, আমার বোনের মত স্কুলে যেতে পারিনি, স্কুলে পড়তে দেয়নি, ভর্তি নেয়নি। আমি পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা দিতে পারি নি, এসএসসি দিতে পারবো কীনা জানি না। কিন্তু আমি পড়তে চাই, আমরা মত যারা রয়েছে তারা যেন লেখাপড়া করতে পারে।

ইসাবা বলে, আমরা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারি না আমাদের জন্য বিআরটিসির একটি বাস সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা করা হোক বলে বক্তব্যে বলেছি। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে ইসাবা আরও বলে,‘আমাদেরও খুব মন খারাপ হয়, দুঃখ-কষ্ট হয়,আনন্দ হয়, মানুষ হিসেবে চাই আমাদের সম্মান করুন।

এসময় পাশে থাকা ইসাবার শিক্ষক সারাহ মারিয়া বলেন, ‘ওদেরকে কিছু বললে ওদেরও খারাপ লাগা কাজ করে-কিন্তু এগুলো কেউ বুঝতে চায় না। কিন্তু বোধটাও ওদের ভেতরেও আছে-এটাই আমরা বুঝতে চাই না।’

সারাহ মারিয়া বলেন, ইসাবাদের উপযোগী কোনও কারিকুলাম নেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়, তাই কেউ লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাইলেও সাধারণ স্কুল ছাড়া ওদের জন্য বিশেষায়িত স্কুলগুলোতে কোনও সুযোগ নেই।

এ সময় ইসাবা বলে, ‘প্রধানমন্ত্রী কাছে ডেকে আমাকে অনেক উৎসাহ করেছেন। জানতে চেয়েছেন, আমি পরীক্ষা দিতে চাই কীনা। তারপর আমাকে বলেছেন, তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে, চিন্তা করো না। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।’

কেবল ইসাবাকে কাছে ডেকেই নয়, পরে নিজের বক্তব্যেও তিনি বারবার ইসাবার কথা বলেছেন। ইসাবা নিরাপত্তায় শিক্ষা, অধিকার-সম্মান-আবেগ যতগুলো বিষয় নিয়ে কথা বলেছে, প্রতিটি বিষয় তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, জানান সারাহ মারিয়া।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আমি যখন ইসাবার বক্ততা শুনছিলাম, তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল। ইসাবা বলেছে সে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা। আমি বলব সে দিতে পারবে।

আর প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাসে ইসাবা সারাবাংলাকে বলে, তারা সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর