Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দায়িত্বশীল পদে’ বিদ্রোহীদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা বন্ধ

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:২৫

ঢাকা: স্থানীয় নির্বাচনে যে সব নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থন দিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগে দায়িত্বশীল কোনো পদ পাবেন না বলে সাংগঠনিক সম্পাদকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির এই নির্দেশনা মেনে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সাংগঠনিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে দলকে আরও সুংগঠিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, ‘গত বৈঠকে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলকে আমরা চাঙ্গা করতে চাই, প্রস্তুত করতে চাই। আমাদের নেত্রী যে সব নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোকে মূলমন্ত্র এবং সঠিক গাইডলাইন হিসেবে ধরে তা বাস্তবায়নের জন্য কৌশল নির্ধারণ করেছি।’

নেতারা বলেন, আমাদের নেত্রীর গাইডলাইন অনুযায়ী সাংগঠনিক কিছু সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সংশয় ছিল। সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি। গত কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমাদের দলের যারা বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, তারা কোনো সাংগঠনিক দায়িত্বশীল পদে আসতে পারবেন না এবং আগামী দিনে দলের মনোনয়ন পাবেন না। তাহলে কি যারা বিদ্রোহী ছিল তাদের একেবারেই দায়িত্বশীল সাংগঠনিক পদ থেকে বাদ দেওয়া হবে, না কম গুরুত্বপূর্ণ পদে তার রাজনৈতিক দুঃসময়ে ত্যাগ-তিতিক্ষার অবদান অনুযায়ী দলের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে? এ বিষয়টি আমরা সবাই ক্লিয়ার করে দিয়েছি। বাকিটা আমাদের দলীয় সভাপতির শেখ হাসিনার নির্দেশেনা অনুসারে সবাইকে গাইডলাইন দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, ‘আমাদের দলের অনেক ত্যাগী নেতা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে অভিমানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন? সে বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে। তারপরও আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো- আগামী দিনে তৃণমূলের যে সম্মেলনগুলো হবে সেখানে তারা কোনো দায়িত্বশীল পদে আসতে পারবেন না। এ বিষয়টি আমাদের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় নেতাদের ক্লিয়ার করে দেওয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের নেত্রীর সাংগঠনিক নির্দেশনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, আগামী জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে।’

পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠকে অবহিত করেন, আমাদের দলের জেলা-উপজেলায় নিয়মিত সম্মেলন না হলেও কেন্দ্রীয় সম্মেলন নিয়মিত হয়ে থাকে, তাই আগামী সম্মেলনের যথাসময়েই হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন। এই দিনটি আমাদের জন্য তথা গোটা বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যপূর্ণ বহন করে। আমরা জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। কারণ দিনটি শুধু ৭৫ তম জন্মদিন নয়, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক পূর্ণ হতে যাচ্ছে। জন্মদিন উপলক্ষে সেদিন সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আমাদের দলের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিজ্ঞজনরা বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। এটির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে।

এ ছাড়াও বৈঠকে করোনা মহামারির কারণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনেক কর্মসূচি উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। আগামী দিনে কিছু কর্মসূচি পালন করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শুরুর আগে সাংবাদিককের সামনে ব্রিফিং করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি করোনা মহামারির কারণে দলের সাংগঠনিক স্থবিরতায় প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের পাশে থাকে। করোনার এই সময়েও আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। করোনার সময় আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যহত হলেও বর্তমানে সংক্রমণের হার অনেকটা নিম্নমুখী হওয়ায় সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সংগঠনের সকল শাখা জেলা মহানগর উপজেলার ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত যে সকল শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সে সকল শাখার কাউন্সিল দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দলের সভাপতি নির্দেশনা দিয়েছেন। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের পার্টি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। অনেক জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে। সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সম্পাদকমণ্ডলীর সভার পর এই কার্যক্রম আরও দ্রুততা পাবে। আমরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দলকে পুরোপুরিভাবে নতুন মডেলের রিকাস্ট করতে চাই। আমাদের দলকে আরও আধুনিক আরও শক্তিশালী সুসংগঠিত আরও সুশৃঙ্খল দল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য আমাদের দলে যেখানে যেখানে আভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে সেই সব সমস্যার সমাধানে আমাদের বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগের মতো তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন।’

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর সভাপতিত্বে সভায় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল ইসলাম চৌধুরী নাদেল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান সহ সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদকমণ্ডলীর সভা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর