দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ
২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৪৪
ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ২০ ভাগ কাজ। সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ, ২০২৩ সালের জুনেই এই টার্মিনাল উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, এই টার্মিনালের কাজ সম্পন্ন হলে শুধুমাত্র শাহজালাল বিমানবন্দরেই বছরে ২ কোটি যাত্রী সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে এই বিমানবন্দরে ৮০ লাখ যাত্রী সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো মাহবুব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ইতোমধ্যেই ১৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, যা আমাদের লক্ষ্যের চেয়েও বেশি। করোনার মধ্যেও কখনো কাজ বন্ধ হয়নি। শ্রমিকদের জন্য পিসিআর টেস্ট, কোয়ারেন্টাইন ও হাসপাতালের ব্যবস্থাও করেছি। যেভাবে কাজ চলছে তাতে প্রত্যাশা করছি ২০২৩ সালের জুনেই থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করতে পারব। আর এটি চালু হলে যাত্রীসেবা বাড়বে, বাংলাদেশ যাবে অনন্য উচ্চতায়।
এ বিষয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, করোনার মধ্যেও শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলমান ছিল। অনেক শ্রমিক করোনায় আক্রান্তও হয়েছে, তবুও আমরা কাজ চলমান রেখেছি। চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করা।
এদিকে সিভিল এভিয়েশন বলছে, গত বছর নির্মাণকাজের শুরুতে দফায় দফায় পাঁচটি শক্তিশালী বোমা উদ্বার করা হয় নির্মাণাধীন এলাকা থেকে। এরপরও কাজ থেমে থাকেনি। সতর্কতার সঙ্গে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। কাজ করছে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক।
জানা গেছে, থার্ড টার্মিনালে থাকবে সকল প্রযুক্তির ছোঁয়া। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই বিমানবন্দরটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। সিঙ্গাপুরের চ্যাংগি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নকশা করেছেন তিনি।
আরও জানা যায়, এই বিমানবন্দরে একসঙ্গে ৩৭টি বিমান অ্যাপ্রোন বা পার্ক করার জায়গা থাকবে। আর ভেতরে থাকবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এছাড়াও থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সিস্টেম। নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর লাগানো হবে। যারা বিমানবন্দরের দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য থাকবে এই ব্যবস্থা। এছাড়া আরও থাকবে বেবি কেয়ার-চিলড্রেন প্লে এরিয়া, ফার্স্ট-এইড, থাকবে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকসহ হেলথ ইন্সপেকশন সুবিধা, মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, ওয়াই-ফাই সুবিধা, এমনকি যাত্রীদের কেনাকাটার জন্য তৈরি হচ্ছে ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ। তবে এই বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে করে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। ফলে যানজট ভোগান্তি কমবে যাত্রীদের।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন এবং খসড়া মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তোলা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর বিমানবন্দরটি নির্মাণে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। শুরুতে টার্মিনালটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। সবমিলে এখন প্রকল্পটির খরচ ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জাইকা।
সারাবাংলা/এসজে/এএম